গরীবের আবার পহেলা বৈশাখ!

খলিলুর রহমান : আমাদের আবার পহেলা বৈশাখ! দিন আনি আর দিন খাই। রুজি না করলে না খেয়ে থাকতে হয়। গরীবের কি কোনো পহেলা বৈশাখ আছে?

সোমবার রাত আড়াইটায় এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন নৈশ প্রহরী মাহমুদ আলী (ছদ্মনাম)।

মাহমদু আলী সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ জল্লারপাড়ে বসবাস করেন। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলায়। তিনি ৩১ বছর থেকে সিলেটে বসবাস করছেন।

তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি ৩১ বছর আগে সিলেটে এসেছিলেন। আড়াই লাখ টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য সিলেট আসেন তিনি। প্রথমে তিনি সিলেট এসে ঠেলা গাড়ি চালানো শুরু করেন। ওই গাড়ি চালিয়ে তিনি প্রথমে ঋণ পরিশোধ করেন। এর
পর তিনি আরো বাড়ি ফিরেননি। ঠেলা গাড়ি চালিয়ে সিলেটেই এখন জীবনধারণ করেন।

মাহমুদ আলীর ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে একটি কাপড়ের দোকানে চাকুরি করে। বাকি দুই ছেলে এখানো প্রাইমারি স্কুলে খেলাপড়া করে। আর দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি।

এসব বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ঠেলা গাড়ি চালিয়ে আমি অনেক টাকা আয় করেছি। বাড়ি থেকে যে দেনা করে আসছিলাম তাও পরিশোধ করেছি। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করার কারণে জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। বুকে সবসময় ব্যথা করে। তাই ৫ বছর আগে ডাক্তারের কাছে যাই। তখন ডাক্তার উপদেশ দিয়েছিলো কোনো ভারি কাজ করা যাবে না। ডাক্তারের এমন উপদেশ পেয়ে বড়ই বিপদে পড়ে যাই। কি করবো আমি। ঠেলা গাড়ি না চালালে কিভাবে পরিবার চালাবো? কে আমকে খাওয়াবে? এমন হাজারো চিন্তা নিয়ে হালকা কাজের খোঁজ করতে থাকি। এক পর্যায়ে সিলেট শহেরেই নৈশ প্রহরীর হিসেবে একটি মাকের্টে কাজ শুরু করি। এখনও ওই কাজই করে খাচ্ছি।’

তিনি জানান, নগরীর একটি মার্কেটে ডাবল উিউটি করে বেতন পান ৯ হাজার টাকা। ওই টাকা থেকে তিনি প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা বাসা ভাড়া দেন। বাকি ৬ হাজার টাকা দিয়ে চলে পরিবারের যাবতীয় খরচ।

পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আবার বৈশাখ কিসের। বছরের সব দিনই আমাদের জন্য সমান।’

বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠেন। তারপর কিছুক্ষন্ন নিরব থেকে পুনরায় বলেন, ‘আমার ছোট্ট ছেলেটা পহেলা বৈশাখের পোষাক কেনার জন্য কান্না করছে। কিন্তু আমার এই অবুঝ ছেলেকে একটি পোষাক কিনে দিতে পারিনি।’

তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলেন, ‘আজ এপ্রিল মাসের ১৪ তারিখ। এখানো বেতন পাইনি। আমার ছেলেকে বৈশাখী কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য অনেকের কাছে টাকা ধার চেয়েছি। কিন্তু কেউই আমাকে টাকা ধার দেয়নি।’

ভোরে পান্তাভাত খাবেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমরা তো সারা বছরই পান্তাভাত খাই। পয়লা বৈশাখর দিন আর কি পান্তাভাত খাব।’

poor-01



মন্তব্য চালু নেই