গণহত্যা দিবস পালিত হবে ২৫ মার্চ
২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হবে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পর এর উপর আলোচনা শেষে শনিবার প্রস্তাবটি কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। এর ফলে সরকারের নির্বাহী বিভাগ ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এ উদ্যোগ নেয়া হলো।
শনিবার বেলা ৩টা ১০ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া বৈঠকে প্রস্তাবটি প্রত্থাপন করেন ফেনী-১ আসনের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের এমপি শিরিন আখতার।
প্রস্তাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হউক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হউক।’ পরে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে সেই সময়ের বর্বরতার স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন তিনি।
স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিরিন আক্তার বলেন, ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের বর্বর হানাদার বাহিনী কাপুরুষের মতো পাশবিক হিংস্রতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর। সামরিক শাসক ইয়াহিয়ার নির্দেশে জেনারেল টিক্কা খানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে সামরিক অভিযান সংগঠিত হয়, যা ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যা। তাই অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে এই দিনটি শুধু আমাদের কাছে নয়, বিশ্বের গণহত্যারও এক উদাহরণ এবং স্মরণীয় দিন। সেদিন পাকিস্তানিরা আমাদের শুধু হত্যাই করতে চায়নি, বাঙালি জাতিসত্তা বা হত্যা করার ব্রত নিয়ে অপারেশন চালিয়েছিল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম গণহত্যার কোনো সাক্ষী যেন না থেকে সেজন্য বিদেশি সাংবাদিকদের পরদিন সকালে বের করে দেয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয় আজকে সুসভ্য বিশ্বসমাজ ও বিশ্বমানবতার অগ্রযাত্রার স্বার্থেও অন্তত একটি দিন গণহত্যার মতো পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য নির্ধারিত থাকা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাবের সমর্থন করে বলেন, ২৫ মার্চকে গণগত্যা দিবস পালন করতে চাচ্ছি। সেইদিন পাকিস্তান তাদের সমস্ত বাহিনী নিয়ে এই দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর আক্রমণ শুরু করে। ঘুমন্ত জাতির উপর অত্যাচার শুরু হয়ে চলে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। স্বাধীনতার পরও আমাদের দেশে গণহত্যা চলতে থাকে।
তিনি গণহত্যার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, জাতিসংসঘের কনভেনশন অনুযায়ী আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
এরপর বর্ষীয়ান পার্লামেন্টেরিয়ান তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনার সূত্রপাত হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দিবস আছে, অন্যান্য দিবস আছে। ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের মাস। ১ ডিসেম্বরকে আমরা মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে পালন করতে পারি কি-না, এটা বিবেচনা করার জন্য জাতীয় সংসদে উত্থাপন করছি।’
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির জন্ম হয়েছে জামায়াত ইসলামীর ঔরস থেকে। তাই তারা জামায়াতের পক্ষে কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক। নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানার জন্য এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করা খুব জরুরি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একটি ট্রুথ কমিশন গঠন করে পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওনা আদায় করতে হবে।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, স্বাধীনতার সেই ভয়াবহ সময় দেখতে পায়নি, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে পারিনি। তাই এ প্রস্তাবকে সমর্থন করছি। আর ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের জোর দাবি জানাচ্ছি।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, আমি প্রস্তাব রাখতে চাই সিমলা চুক্ত অনুযায়ী ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী তাদের যে বিচার করার কথা ছিল সেই বিচার পাকিস্তান করেনি। যারা আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকারের কথা বলেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে বিশেষ করে জাতিসংঘের কাছে দাবি থাকবে তাদের বিচারের জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। আন্তর্জাতিক আদালতে এসব রাজাকারের বিচার করতে হবে।
জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল বলেন, সারাবিশ্বকে জানাতে হবে এত দাম দিয়ে কোনো জাতি স্বাধীনতা কেনেনি। তাই পাকিস্তানের দোসরদের বিষয়ে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জেনারেল জিয়া ২৬ মার্চ পাকিস্তানিদের পক্ষে সারাদিন বোয়ালখালিতে ছিলেন, আক্রান্ত সৈনিক বা মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে একচুলও সাহায্য করেননি।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণার দাবি নিয়ে বলেন, পৃথিবীবাসী জানুক আমরা এই দিবসটি ভুলি নাই। এ জন্য এই দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হোক।
আলোচনা শেষে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাবটি ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হওয়ায় ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হবে।
মন্তব্য চালু নেই