গণতন্ত্র নয়, সরকারের নজর উন্নয়নে

সরকারের নজর এখন উন্নয়নের দিকে। আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম অপরিহার্য আনুষঙ্গ গণতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে ‘উন্নয়নতন্ত্রকে’ নীতি হিসেবে নিয়ে হাঁটছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। গত কয়েক বছরে নেয়া বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারবিরোধীদের বিরোধিতার জবাব দিতে চান তারা। এ ক্ষেত্রে তারা কখনো সিঙ্গাপুর, কখনো মালয়েশিয়া আবার কখনো বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশকে অনুসরণ করে এগোতে চান। এর মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতা পাকাপোক্ত হবে বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘আমরা অতি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নই, আমরা উন্নয়নে বিশ্বাস করি’।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেছেন, এ সরকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ধারাবাহিকতা দরকার। সেজন্য বিএনপি জোটের বাধার পরও জনগণ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। আর ২০৪১ সালের আগেই এ দেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করা হবে। এ ক্ষেত্রে কারো কোনো বাধাই কাজে আসবে না।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ বৃহৎ কর্মকাণ্ডের বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের তালিকায় নিয়ে যেতে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। এরই মধ্যে নেয়া প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে বিগত মহাজোট সরকারের সময় নেয়া আটটি বড় অগ্রাধিকার প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তদারক করছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতা আলাপকালে জানান, দেশের মাথাপিছু আয় এখন এক হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের যে ১১টি দেশ অর্থনীতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। দেশের উন্নয়নে সরকার এরই মধ্যে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সব ধরনের বাধা অতিক্রম করে সরকার এগিয়ে যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সরকার বর্তমানে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়নে গণতন্ত্রের সাময়িক ব্যাঘাত ঘটলেও কিছু করার নেই। আর দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকলে একসময় মানুষ গণতন্ত্র নিয়ে আর মাথা ঘামাবে না। তার মতে, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে গণতন্ত্র না থাকলেও তারা বেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ। তাই বাংলাদেশও যেকোনো মূল্যে এগিয়ে যাবে।

তবে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, উপরে যাই বলা হোক না কেন, বিএনপি জোটকে নিয়ে সরকারের ভেতরে এখনো আতঙ্ক বিরাজ করছে। চলমান সঙ্কট কাটিয়ে যেকোনো সময় বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে তাদের। কিন্তু বিএনপিকে কোনোভাবেই সেই সুযোগ দিতে রাজি নন তারা। সেজন্য বিভিন্ন মামলা, জেলজুলুম এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে এক দিকে বিএনপিকে চাপে রেখে, অন্য দিকে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে চান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। এতে দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিএনপি একসময় আরো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি যতই লাফালাফি করুক না কেন কোনো লাভ নেই। ভবিষ্যতে তাদের অস্তিত্বই থাকবে না। কারণ, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের মানুষ এক সময় তাদের ভুলে যাবে। এতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে।

এ ব্যাপারে দলের অন্যতম সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে ঠিকই কিন্তু সেটি গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে নয়। আসলে বিএনপির মতো একটি বড় দল সংসদের বাইরে থাকায় দেশে গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ধারণা বিরাজ করছে, যা মোটেও ঠিক নয়। তারা সংসদে না থাকলেও বাইরে থেকে প্রতিদিন সরকারের বিরুদ্ধে যা খুশি বলছে। অন্য দিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সংসদে কার্যকর সমালোচনার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে মজবুত করছে। সেজন্য নবম সংসদের চেয়ে দশম সংসদ আরো বেশি কার্যকর রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই