গণজাগরণ মঞ্চের দুই বছর পূর্তিতে ঐক্যবদ্ধের আহবান
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কসাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় মেনে নিতে না পেরে লাখো জনতার গন্তব্য হয়েছিল শাহবাগের এই প্রজন্ম চত্বর। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে এক ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের সূচনা হয়েছিল।
শাহবাগের গণজাগরন মঞ্চের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি হয় এবং তার ফলশ্রুতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী করে কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপকেক্ষর আপিলের সুযোগ সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে জাতি দায়মুক্তির ঐতিহাসিক সুযোগ লাভ করে কাদের মোল্লার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা এবং অবশেষে ঐ বছরেরই ১২ ডিসেম্বর এই নরপিশাচের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের মাধ্যমে।
একের পর এক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ এগিয়ে চলে এবং বেশ কয়েকটি মামলার রায় ঘোষিত হয়। এর মধ্যে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী বিচারকাজ শেষ হওয়ার আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। জাতি হিসেবে আমরা যেমন কাদের মোল্লার মত ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদন্ড প্রদানের মাধ্যমে দায়মুক্তির সুযোগ পেয়েছে, তেমনি কতক যুদ্ধাপরাধীর স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের রক্তকে আরো কষ্ট দিয়েছে। এর বাইরে সমগ্র জাতির এক ঐতিহাসিক ঐক্য শাহবাগ আন্দোলনের ফসল। গণজাগরন আন্দোলন বাঙালী জাতিকে নতুন করে স্বাধীনতাবিরোধেিদর রাজনীতির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের মন্ত্রে জাতিকে উজ্জীবিত করেছে। এর ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি আজ সস্বাধীনতাবিরোধী চক্রের রাজনীতির রাজনীতির নামে চলমান গণবিরোধী সহিংসতা এবং অব্যাহত মানুষ খুনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধেও মানুষ ুিদকে দিকে প্রতিরোধ সংগঠিত করেছেন। এই প্রথমবারের মত ঘণতান্ত্রিক অধিকারের নামে হরতা- অবরোধের লেবাসে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তের বিরুদ্ধে গণহারে “না” বলতে শুরু করেছেন। এই হরতাল অবরোধকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষ প্রানান্ত চেষ্টায় জনজীবনও রাষ্ট্রের সাভাবিক গতি প্রবাহকে টচলমান রাখছেন। এটি শাহবাগের এই প্রজন্ম চত্বরকে কেন্দ্র করে সারাদেশের ঐতিহাসিক গণজাগরনেরই পরোক্ষ ফল হিসেবে আমরা মনে করি।
গণজাগরণের এই দুই বছর পরে এসে একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজে একধরনের স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে বিচার সম্পন্ন হওয়া যুদ্ধাপরাধীদের রায় বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও ট্রাইবুন্যালের দায়িত্বশীলদের তরফ থেকে সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এসব কিছু মিলিয়ে একটা অনিশ্চিত দেশবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে।
গণজাগর মঞ্চের দুই বছর পূর্তিতে সাংবাদিক সম্মলনে বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক আজ দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ। তারা রাজনীতির নামে, গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে হরতাল-অবরোধের লেবাস লাগিয়ে জনসাধারনের উপর হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। একের পর এক পেট্রোল বোমা মেরে তাদের ম মানুষ খুনের রাজনীতি যেকোন বিবেকবান মানুষকে আজ স্তম্ভিত করে দেয়। আজ সময় এসেছে এই অপশক্তির বিরুদ্ধে নতুন করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার, রাস্তায় নেমে আসার। আমরা দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই, দুই বছর আগে যেভাবে দেশের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার খলননায়কদের সর্বোচ্চ সাজার দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, একই ভাবে আজ সেই অপশক্তি কর্তৃক জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দেওয়া হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসুন, দিকে দিকে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলুন।
সাংবাদিক সম্মেলনে গণজাগরন মঞ্চের দুই বছরের পুর্তিতে দাবি করা হয়- ১. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ ত্বরান্বিত করতে হবে। রায় ঘোষিত সকল যুদ্ধাপরাধীর সাজা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড কার্যকরে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামাতে ইসলাম ও ইসলামী ছাত্র শিবিরকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
৩. রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক অধিকারে নামে পেট্রোল বোমা মেরে পরিচালনাকারী, সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
৪. জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে মহান জাতীয় সংসদে বিশেষ আইন পাশ করতে হবে।
শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে একই দাবিতে সংগঠন সমুহ-
১. গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সংগঠকবৃন্দ
২. ব্লগার এন্ড অনলাইন এক্টিভিষ্ট নেটওয়ার্ক (বোয়ান)
৩. বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম-বোয়াফ
৪. বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী
৫. বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ)
৬. মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড
৭. জাগ্রত জনতা সহ আরও বিভিন্ন সংগঠন।
সাংবাদিক সম্মলনে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট্য ব্লগার অমি রহমান পিয়াল, ব্লগার কবীর চৌধুরী তন্ময়, সংগঠক হাবিবুল্লাহ মিছবাহ, সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী, সংগঠক খালেদুর রহমান শাকিল, সংগঠক মেহেদি হাসান, কালাম সহ আরও অন্যান্য কর্মী ও নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্য চালু নেই