খোকা-মান্নার কথোপকথন ফাঁস (অডিও), গোয়েন্দা নজরদারিতে মান্না

আমার ফোনালাপ সত্য তবে বিকৃত

বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা এবং একজন তথাকথিত লবিস্টের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি স্বীকার করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তবে তার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তার অভিযোগ। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ফেসবুকে পাতায় এক স্ট্যাটাসে এ কথা বলেন মান্না। তার স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:

দু’টি কথোপোকথন প্রসঙ্গে
সামগ্রিক ঘটনায় আমি বিস্মিত, দুঃখিত, মর্মাহত। এ পর্যন্ত আমার রাজনীতি জীবনে কখনও সহিংসতা, ষড়যন্ত্রকে প্রশ্রয় দেইনি। আমার অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে। যে দুটো সাক্ষাৎকার ছেপেছে পাঠকদের অনুরোধ করবো যেন ভালো করে সেটা শোনা এবং পড়ে দেখার। কোথাও কোনো ষড়যন্ত্রের গন্ধ নেই, উস্কানি নেই। সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে কথা হয়েছে আলাপচারিতার মতো আন্দোলনের প্রসঙ্গ এসেছে আমি বলেছি, গণতন্ত্রের দাবিতে আমি আন্দোলনে সমর্থন করি। সহিংসতা সমর্থন করিনা। এ থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যে ব্যাপক জনগণকে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা উচিত। সহিংসতা দায়িত্ব নিয়ে বর্জন করা উচিত। এ আন্দোলনে এখনও ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে। এ জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত ও বিস্তৃত করতে হবে। এটা করতে গিয়ে যদি পুলিশি বা সন্ত্রাসী হামলায় দু’চার জনের জীবনও যায় কিছু করার নেই। এমনিতেই তো মানুষ মরছে। আমার এই বক্তব্যকে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেন আমি লাশ চাই।

একইভাবে সেনাবাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তা আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহী হলে বলব কি না সে কথা জানতে চাইলে, আমি বলেছি রাজি আছি। আমি রাজনীতি করি সবার সঙ্গে কথা বলতে হয়। এটা থেকে এক এগারো বা সামরিক কু’য়ের ষড়যন্ত্রের আবিষ্কার হয় কিভাবে? যেখানে এরকম কোনো বৈঠকই হয়নি।

দেশের এই যুগসন্ধিক্ষণে কারও চরিত্র হননের কাজ সংকটকে আরও ঘণিভূতই করবে। আমি আশা করি সবাই শুভ বুদ্ধিতে জাগ্রত হবেন এবং এই সংকটকে ইতিবাচকভাবে মোকাবিলা করবেন।

ফোনালাপ ফাঁস: গোয়েন্দা নজরদারিতে মান্না
অজ্ঞাতনামা এক লবিস্টের সঙ্গে টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছেন তিনি। যেকোনো মুহূর্তে গ্রেপ্তার হতে পারেন এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার আতঙ্কে আছেন বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মান্না।
একটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে তার ওই সংলাপ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সোমবার। প্রতিবেদন প্রকাশের পরই সরকারের ওপর মহল ক্ষুব্ধ হয় এবং তার ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়।
সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
ফোনালাপের কে স্পষ্ট হয়, ওয়ান ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে সেনা হস্তক্ষেপে ভূমিকা রাখার আগ্রহ রয়েছে মান্নার। আর যার সঙ্গে তিনি কথা বলেন সেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিও এক/এগারোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সংলাপে সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ দুই কর্মকর্তার (লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদা) সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনাও করা হয়।

সংলাপের অংশ বিশেষ:

মান্না: আছো কেমন তুমি?
অজ্ঞাত: জ্বি আমি ভালো আছি। আপনার শরীর কেমন ভাইয়া?
মান্না: আমি ভালো আছি, থ্যাংক ইউ।
অজ্ঞাত: জি বলেন ভাইয়া, কি খবর?
মান্না: খবর তো…দেশের খবর…যেকোনো দিকে যাচ্ছে…রিলেটিভলি পাবলিকের সাপোর্টের দিকে বিএনপি এগিয়ে আছে। কিন্তু এগোচ্ছে না কোনোদিকে।
অজ্ঞাত: মেরুকরণ দিতে পারছেন নাতো ভাইয়া।
মান্না: হ্যাঁ সেটা পারবেও না বোধ হয়।
অজ্ঞাত: পারবেও না। বাট ওই যে, ওইদিকে কিন্তু উত্তরপাড়া কিন্তু গরম হচ্ছে।
মান্না: আর কি গরম, আর কবে হবে? যা হয়ে গেছে দেশে এর চেয়ে বেশি তো কিছু আর হতে পারবে না।
অজ্ঞাত: সাপোর্টটা ছিলো না যে।
মান্না: না… এখনতো আছেই।
অজ্ঞাত: এখন মনে হয়, একটা দিকে….. আপনার সাথে যোগাযোগগুলো আছে, না ভাইয়া?
মান্না: না আমার সাথেতো কারো কোনো যোগাযোগ নেই।
অজ্ঞাত: উড ইউ লাইক টু?
মান্না: হু?
অজ্ঞাত: উড ইউ লাইক টু? ডু ইউ ওয়ান্ট মি টু কল ইউ?
মান্না: আমারতো অন্তত বুঝতে হবে বিষয়টা না? বুঝতে তো হবে… সেটাতো আমি চাই।
অজ্ঞাত: এখন আপনি যদি কথাবার্তা না বলেন তাহলে কিভাবে বুঝবেন ভাইয়া? কথাবার্তা বলে আপনার কিছু, একটা তাদের কিছু একটা… দেখেন। ইউ হ্যাভ সিন দ্য ওয়ার্ল্ড। ইউ হ্যাভ সিন… সবার সব কিছু দেখছেন। আমি আপনার অনেক ছোট। বাট দেশে পরিবর্তন আনতে চাইলে আপনার আমার মনে হয়, কথা বলা দরকার। উনারাই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যদি আপনি বলেন….
মান্না: হ্যাঁ, করলেতো আমি বলবো।
অজ্ঞাত: ওকে ঠিক আছে। আমি তাহলে আপনাকে একজনকে দিয়ে কল করাবো। আপনাকে জিওসি লেভেলে কল করাবো? না আরেকটু সিনিয়র?
মান্না: বুঝি নাই, কথাটা শুনতে পাই নাই।
অজ্ঞাত: বলছি, জিওসি লেভেল থেকে কল করাবো দুইচার-পাঁচদিনের মধ্যে, না আপনার, আরেকটু সিনিয়র কাউকে দিয়ে করাবো?
মান্না: জুনিয়র সিনিয়রতো একটা ব্যাপার আছে।তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে ইফেক্টিভ যারা। অ্যান্ড হু আন্ডারস্ট্যান্ড হু নো, এ রকম হলে ভালো। মানে যার সাথে শেয়ার করা যাবে, যিনি আমাকে এনলাইটেন করতে পারবেন এবং মে বি আমিও তাকে বুঝতে পারবো, বোঝাতে পারবো।
অজ্ঞাত: আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।
তার এই সংলাপ থেকে ধারণা করা হয় যে, সেনা হস্তক্ষেত্রে ভূমিকা রাতে তিনি আগ্রহী।
প্রকাশিত অপর ফোনালাপে বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে আন্দোলন নিয়ে আলাপ করেন তিনি। এতে নাগরিক ঐক্যের ব্যানারে আন্দোলনের নানা পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই তিনটি লাশ পড়লে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই তিনটি হল দখল করলে সরকারকে চাপ দেয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা। এমন পরিবেশ তৈরি করলে বিদেশিরা সরকারকে আরো চাপ দেবে বলে তাদের পরিকল্পনায় উঠে আসে।
জানা গেছে, ফোনালাপ প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে সরকারের ওপর মহলে আলোচনা হয়েছে। সরকার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সরকার বারবার বলে আসছে সংবিধানে অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ সোমবার সকালে এক অনুষ্ঠানে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
মাহমুদুর রহমান মান্নার ওপর পুলিশের কড়া নজরদারি নিয়ে ডিসি ডিবি মনিরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয় তার মোবাইলে। কিন্তু মোবাইলে তাকে না পেয়ে তার অফিসে যাওয়া হয় দুপুরে। সেখানেও তাকে পাওয়া যায়নি।
জাতীয় সংলাপ নিয়ে পর্দার অন্তরালে যারা উদ্যোগ নিয়েছেন মাহমুদুর রহমান মান্না তাদের অন্যতম। পরে অবশ্য দলীয় বিবেচনায় এ সংক্রান্ত গড়া ১৩ সদস্যের কমিটিতে মান্নাকে রাখা হয়নি।
গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভা ও মানববন্ধনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মান্না আবার ‘ওয়ান ইলেভেন’ আসতে পারে বলে হুমকি দিয়ে আসছেন।
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের একজন তুখোর নেতা হিসেবে মাহমুদর রহমান মান্নার ব্যাপক পরিচিতি ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারই কল্যাণে তিনি দুইবার ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন।
কিন্তু পরে আদর্শে অবিচল থাকতে পারেননি। ধনবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন জাসদ-বাসদের সাবেক এই নেতা।
সাংগঠনিক তৎপরতার কারণে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে তিনি দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হন। ভালোই চলছিল তার রাজনৈতিক জীবন। বগুড়ার মতো জেলায় তিনি আওয়ামী লীগের ভিত শক্তিশালী করতে বেশ খাটাখাটিও করেন।
তবে ঝামেলা বাঁধে ২০০৭ সালে। জরুরি অবস্থা জারির পর তার গায়ে ‘সংস্কারপন্থি’ লেভেল সেঁটে যায়। অনেক জাঁদরেল নেতা তখন ওয়ান ইলেভেনের নায়কদের ‘অত্যাচার নির্যাতনের’ শিকার হলেও মাহমুদুর রহমান মান্নার গায়ে আঁচর পড়েনি। সভানেত্রী গ্রেপ্তার হওয়ার পর সেই দিনগুলোতে তিনি তার মুক্তির জন্য তেমন কোনো উদ্যোগ নেননি। এক পর্যায়ে কর্মীদের রোষের মুখে পড়েন। পরে কাউন্সিলে পদও হারান।
আওয়ামী লীগের পদ হারিয়ে ‘নাগরিক ঐক্য’ নামে সংগঠন গড়ে তোলেন মান্না। অবশ্য নাগরিক ঐক্য আত্মপ্রকাশের আগে ২০১২ সালে তফসিল ঘোষণা হলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন মান্না। অবশ্য নির্বাচন আর হয়নি।
দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্বেষপূর্ণ রাজনীতির বাইরে ‘নতুন’ ধরনের রাজনীতি আনতে চান মান্না। তিনি তৃতীয় একটি ধারা সৃষ্টি করতে চান।
২০১৪ সালের ২০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মতবিনিময় সভায় মান্না বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নানান রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে সামাজিক প্রপঞ্চগুলোতে মনযোগ দেয়ার মতো সময় এবং সুযোগ পায় না। আমরা রাজনৈতিক ও সামাজিক এই দুই আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে চাই। রাজনীতির প্রতি সাধারণ জনগণের একপ্রকার বিতৃষ্ণা আছে। আমরা জনগণের সামনে নতুনভাবে রাজনীতিকে হাজির করতে চাই।’

খোকা-মান্নার কথোপকথন ফাঁস : ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ চান মান্না’ (অডিও)

manna-sadekচলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংলাপের অন্যতম উদ্যোক্তা রাজনীতিবিদ মাহমুদুর রহমানকে একটি অডিও ক্লিপের বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা বলতে শোনা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে । একই সাথে একটি ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে ।
এই ফোনালাপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে ।
আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকালে রাজধানীতে মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য আয়োজিত গণমিছিলের পরিকল্পনা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে বলে ওই অডিও টেপে শোনা যায়।
এছাড়াও বিএনপি-জামায়াত জোটের চলমান আন্দোলন নিয়ে দুই নেতার দীর্ঘ কথোপকথন রয়েছে ওই টেপে। বিএনপি নেতা খোকা আট মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
তবে ফোনালাপের বিষয়ে মান্নার কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার না করে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “খোকা ভাইয়ের সঙ্গে আমার মাঝে মাঝে কথা হয়। তিনিই আমাকে ফোন করেন।”
গ্লোবাল লিকস নামের একটি সংগঠনের ফাঁস করা ‘মাহমুদুর রহমান মান্নার লাশের রাজনীতি’ শীর্ষক সেই ফোনালাপটি আওয়ার নিউজ বিডির পাঠকদের জন্য ।



মন্তব্য চালু নেই