খোঁজ মেলেনি পাইলট রুম্মান তাহমিদের

বিমান বিধ্বস্তের ৩০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পরও সাগরে খোঁজ মেলেনি বিমানবাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রুম্মান তাহমিদ চৌধুরীর। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে সর্বশেষ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান এফ-৭ -এর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তিনি বেঁচে আছেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পরিবারের লোকজন।

গতকাল সকাল থেকে দ্বিতীয় দফায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে অভিযান শুরু করলেও তার কোন খোঁজ দিতে পারেনি বিমানবাহিনীর লোকজন। তাহমিদের জীবন ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাচ্ছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এই ঘটনা দেখার জন্য সাগরপাড়ে ভিড় করছেন উৎসুক জনতা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জাহাজ আলেকজান্ডারের ওয়াচম্যান বাবুল বলেন, আমি নিজে দেখেছি বিমানটা উপর থেকে কাত হয়ে সোজা সাগরে গিয়ে পড়েছে। ওই সময় আমি বহির্নোঙ্গরে কিছু বিদেশী লোকজনের সঙ্গে কথা বলছিলাম। সময়টা ছিল আনুমানিক সকাল ১১টা।

তিনি আরও বলেন, সাগরে ডুবে যাওয়ার পর দূর থেকে আমি একজন মানুষের দুটো হাত পানির নিচ থেকে ওপরে দেখতে পাই। তারপর ঘটনাটি অন্যদের জানালে কোস্টর্গাড অভিযান শুরু করে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নিখোঁজ পাইলট তাহমিদের বাবার নাম আবদুল কাদের চৌধুরী। তিনি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর এলাকায় থাকতেন তাহমিদের পরিবার। গত কয়েক বছর আগে তারা ঢাকায় চলে যান।

বিমানবাহিনীর চৌকস এই পাইলটের নিখোঁজ হওয়ার খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে তার পরিবারে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন তার পরিবারের সব সদস্য। সাগরপাড়ে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষায় দেখা গেছে অন্য সদস্যদের।

আরেক ভাই আদনান রয়েছেন সেনাবাহিনীতে। আর একমাত্র বোন অন্তরা এসএসসি পাস করেছেন সদ্য। প্রিয় ভাইয়ের জন্য তাদের দুশ্চিন্তা কমছে না এতটুকু। সারা রাত ঘুম হয়নি বাড়ির কারও। বাবা-মার অনেক স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়েছিলেন রুম্মান। বন্ধুদের কাছেও ছিলেন ডানপিটে। পরিবারের প্রাণ। সেই মানুষটিকে হারাতে চায় না কোন সদস্য। মেনে নিতে পারছেন না তিনি আর ফিরবেন না।

আল্লাহর কাছে তাই নামাজ পড়ে ভাইয়ের জন্য দোয়া করছেন ছোট ভাই সালমান। তার ভাষায়, ‘ভাইয়া বিমান চালাতে পারতো। তার এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। খবরটা যখন পাই তখন আমরা ভীষণ কেঁদেছি। এখনও আশায় আছি তাকে হয়তো পাওয়া যাবে।’ তিনি আরও বলেন, সকালে ঘটনার পরপরই আমরা বেরিয়ে পড়ি তার খোঁজে। ভাইয়া ছাড়া আমাদের পরিবার কল্পনা করা যায় না। সে ভীষণ মেধাবী ছিল। হাসিখুশি থাকতো।

নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজ সুরভী, মধুমতি ও অতন্দ্র, কোস্টগার্ডের জাহাজ তৌফিক সাগরের একটির অংশে সর্বশেষ অবস্থান করছিলেন বিকালে। পাশাপাশি বিমানবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে এই বিষয়ে কোস্টগার্ড পূর্বাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দরুল হুদা বলেন, এখনও তার কোন খোঁজ পাইনি আমরা। তবে চেষ্টা চলছে।



মন্তব্য চালু নেই