খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয় হাজার কোটি টাকা
দেশে খুদে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। সর্বশেষ তথ্যমতে, স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় শিক্ষার্থীদের হিসাব ১২ লাখ ৫৭ হাজার ছাড়িয়েছে। আর এসব হিসাবে সঞ্চয় হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের (সেস্টেম্বর-ডিসেম্বর ’১৬) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ৫৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ১২ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭০টি হিসাব খোলে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা। এ মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীদের ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৪টি এবং গ্রামের শিক্ষার্থীদের ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৬টি হিসাব রয়েছে। এসব হিসাবের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাসে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে চালু হয় স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও আমানতের পাল্লা ভারি হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের সঞ্চিত টাকা বিনিয়োগ হয়ে জাতীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময় পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো এগিয়ে থাকলেও সেপ্টম্বর-ডিসেম্বর ২০১৬ সময়ে হিসাব সংখ্যা কমেছে। তিন মাসে ১৫ হাজার ৬৯৮টি হিসাব কমেছে। অর্থাৎ ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮২০টি। আর এসব হিসাবে মোট স্থিতি ৮৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। তিন মাস আগে সেপ্টম্বর পর্যন্ত এ খাতের ব্যাংকগুলোয় খোলা হিসাব ও সঞ্চয় স্থিতি ছিল ৭ লাখ ৫২ হাজার ৫১৮টি ও ৮৩৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৫১১টি হিসাব খোলা হয়েছে। এসব হিসাবের বিপরীতে সঞ্চয় দাঁড়িয়েছে ১২৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
আলোচিত সময়ে সবচেয়ে বেশি হিসাব খোলা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬২৩টি। যা মোট হিসাবের ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এরপরে অগ্রণী ব্যাংকের ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০৩টি হিসাব রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ডাচ-বাংলা ১ লাখ ২৩ হাজার ১৭২টি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৯৯ হাজার ৪২টি এবং উত্তরা ব্যাংকে ৭৮ হাজার ৯৮১টি হিসাব রয়েছে।
অন্যদিকে টাকা জমার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক ৩৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যা মোট স্থিতির ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এর পর ইসলামী ব্যাংকে ১০৫ কোটি টাকা, ইস্টার্ন ব্যাংকে ৯১ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৫৫ কোটি এবং রূপালী ব্যাংকে ৫৪ কোটি টাকার স্থিতি রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. আবুল বশর বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যাংকমুখী করে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সময় প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। এদিকে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মধ্যে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ইউথ ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল’ (সিওয়াইএফআই)-এ ‘কান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে বাংলাদেশ।
মন্তব্য চালু নেই