খালে চলছে গাড়ি, দুর্ভোগে লামার ২০ হাজার মানুষ
খালে নৌকা চলার কথা থাকলেও বান্দরবানের লামা উপজেলার পোপা খালের মধ্যে দিয়ে চলছে ট্রাক, ট্রাক্টর, ট্রলি, জিপ! অবিশ্বাস্য হলেও শুষ্ক মৌসুমে পানি শুকিয়ে খালটির এমন অবস্থাই হয়েছে। উপজেলার ২০ হাজার মানুষের সুপেয় পানির প্রধান জোগানদাতা এই খালটি দিয়ে সড়কযান চলায় সেই পানি আর এখন খাওয়া বা ব্যবহারের উপযোগী নেই। এতে দুর্ভোগে পড়েছে উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
পাহাড়ে পানির কষ্ট নিত্য বিষয়। শুষ্ক মৌসুম এলে পানির অভাব তীব্র আকার ধারণ করে। পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের পানির মূল উৎস ছড়া, ঝিরি ও খাল। দীর্ঘদিন যাবৎ পাথর, বন ও গাছ উজাড়ের কারণে পাহাড়গুলো বৃক্ষশূণ্য হওয়ার প্রভাবে শুষ্ক মৌসুম এলেই শুকিয়ে যায় পানির উৎসগুলো। এই পরিস্থিতিতে বান্দরবানের লামা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬টি ও রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ২টি ওয়ার্ডের ২০ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছে পোপা খালের সামান্য প্রবাহ।
লামা উপজেলার পূর্ব-উত্তর সীমান্তের শেষপ্রান্ত পোপা মৌজার দোছড়ি এলাকা থেকে পোপা খালের সৃষ্টি। ঘিলাপাড়া ঝিরি ও দোছড়ি ঝিরি দুইটি ‘দোছড়ি’ পয়েন্টে এসে মিলিত হয়। সে স্থান থেকে পোপা খালের শুরু। খালটি দুইটি ইউনিয়নের আটটি ওয়ার্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। দোছড়ি থেকে সৃষ্টি হয়ে রুপসীপাড়া ইউনিয়নের অংহ্লারী পাড়া নামক স্থানে এসে খালটি লামা খালের সাথে মিলিত হয়ে শেষ হয়। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৯ কিলোমিটার এবং গড়ে প্রস্থ ৪০ ফুট। এই অঞ্চলের বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার মানুষের নিত্যদিনের খাওয়া ও ব্যবহারের পানির জোগানদাতা পোপা খালটি।
লামা সদর ইউনিয়নের এই এলাকাটিতে যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই বললে চলে। পাহাড়ি পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে চলে এই এলাকার মানুষ। কিন্তু বর্তমানে বিস্তৃর্ণ এই এলাকাটি থেকে গাছ, বাশঁ, পাথর, বালি আহরণের জন্য সহজ পথ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে পোপা খালটি। দিনে রাতে ২৪ ঘন্টা এই খাল দিয়ে গাছ, বাশঁ, পাথর, বালি পরিবহন করতে চলাচল করছে ট্রাক্টর, ট্রাক, ট্রলি, জীপ। এতে করে খালের পানি সবসময় কাঁদাময় ও ঘোলা হয়ে থাকে। সেই পানি কোন কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকাবাসি। অনেক সময় নিরুপায় হয়ে ব্যবহার করে আক্তান্ত হচ্ছে নানান পানিবাহিত রোগে।
অংহ্লা ডুরী পাড়া বৃদ্ধ অংউয়ে চিং মার্মা (৬৫) বলেন, কোথাও পানি নেই। এই খালের ময়লা পানি দিয়েই করি গোসল। খাওয়ার কাজেও এই পানি ব্যবহার করি। খাল দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ না হলে আমরা কীভাবে বাচঁবো?
চিউনীমুখ এলাকার রবিউল আলম (৪০) বলেন, পানির অভাবে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে আমাদের। এই এলাকায় একমাত্র পানির উৎস পোপা খালটি। ঠাকুর ঝিরি এলাকার রেজাউল করিম (৩৮) জানান, দুর্গম এলাকায় বসবাস করা মানুষগুলোকে ব্যবসায়ীরা মানুষ মনে করে না। শিয়া পাড়ার বাসিন্দা দি ক্রোশ ত্রিপুরা বলেন, দিনে দিনে আমরা অসহায় হয়ে পড়ছি। নদীতে পানি নেই। যা অল্প আছে তাও ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিকার চাই।
৭নং ওয়ার্ডে ইউপি মেম্বার আবুল কাসেম বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় খালটি গাড়ি চলাচলের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এতে করে এলাকার মানুষ প্রচণ্ড পানির কষ্ট ভোগ করছে।
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, বিষয়টি আমি জানতাম না। জনসাধারণের ক্ষতি করে নদী ও খালে গাড়ি চলাচলের বিষয়টি বন্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
মন্তব্য চালু নেই