খালেদার ৪ মামলার পরবর্তী শুনানি বুধবার
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তিন মামলায় হাইকোর্টে করা চার মামলার রুলের শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।
রোববার বিকেলে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আংশিক শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে খালেদার পক্ষে ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল শুনানি করেন। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান শুনানি করেন।
এর আগে দুপুরে খালেদার পক্ষে তার আইনজীবীরা রুলের শুনানি শুরু করার জন্য সময় আবেদন করেন। আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে শুনানি শুরুর নির্দেশ দেন।
মামলা চারটি হল, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতির মামলার বিরুদ্ধে একটি রিট, গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে একটি রিট ও একটি ফৌজদারি মামলা এবং নাইকো দুর্নীতির মামলার বিরুদ্ধে একটি রিট। এই রিটগুলো খালেদা জিয়া হাইকোর্টে দায়ের করেছিলেন।
গত ৮ এপ্রিল এই মামলা চারটির শুনানির জন্য হাইকোর্টের নতুন এই বেঞ্চ নির্ধারণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
গ্যাটকো মামলা :
২০০৭ সালে ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী মতিঝিল থানায় খালেদা জিয়া ও তার কনিষ্ঠ পুত্র সদ্য প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও কমলাপুরের কন্টেইনার টার্মিনালে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের জন্য মেসার্স গ্লোবাল অ্যাগ্রোটেড লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রাষ্ট্রের কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করা হয়েছে।
এরপর ২০০৮ সালের ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। অভিযোগপত্র দায়েরের পর মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই হাইকোর্ট মামলাটি কেন বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করেন। সময়ে সময়ে এই স্থগিতাদেশ বাড়ানো হয়। এ মামলাতেও খালেদা জিয়া জামিনে রয়েছেন।পরবর্তী সময়ে এ বছর দুদকের পক্ষ থেকে এ মামলা তিনটি সচলের আবেদন জানিয়ে রুল শুনানির জন্য আবেদন জানান।
নাইকো মামলা :
ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির করে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ক্ষতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করে দুদক।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) এস এম সাহিদুর রহমান তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়।
পরে এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে এ মামলায় জামিনে রয়েছেন।
বড়পুকুরিয়া মামলা :
১/১১ এর জরুরি অবস্থার সময়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে।
শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম। মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এতে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া।
২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না জানতে চেয়ে সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়ে রুলও জারি করেন।
পরবর্তী সময়ে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
মন্তব্য চালু নেই