সংসদে প্রধানমন্ত্রী :

খালেদার হাতে পোড়া মানুষের গন্ধ

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্মাদ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনেকে সংলাপের কথা বলেন। কার সঙ্গে সংলাপে বসবো? যার (খালেদা জিয়া) হাতে পোড়া মানুষের গন্ধ তার সঙ্গে বসলে তো বার্ন ইউনিটের পোড়া মানুষের গন্ধ পাওয়া যাবে। তাদের সঙ্গে সংলাপে বসা মানে সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করা।’

রোববার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কার্যপ্রণালীর ৬৮ বিধি অনুসারে জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, ‘এই মহিলা (খালেদা জিয়া) মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। আর আলোচনা করবো কীভাবে? আর আলোচনা করলেই কি উনি মেনে নেবেন? সে তো মেনে নেবে না।’

এ সময় সভাপতির আসনে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জাতীয় সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। তিনি এসএসসি পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নোটিশটি উত্থাপন করেন।

সংসদ নেতা বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খাওয়ার মামলার থেকে নিজেকে এবং অর্থপাচারের মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতেই বিএনপি নেত্রী এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে না এসে হতাশা থেকে এখন হা-হুতাশ করছেন। আর হতাশার আগুনেই উনি (খালেদা জিয়া) সবকিছু শেষ করে দিতে চান। নির্দেশ দিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করাচ্ছেন।’

ক্ষুব্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন কী এতটাই খেলো হয়ে গেছে? তাদের জীবনের কী কোনো মূল্যে নেই। আমরা কোনভাবেই মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে দেব না। তাই সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা এ ধরনের হীন কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রূখে দাঁড়াতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো হীন ও জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ ও রুখে দাঁড়াতে হবে।’

নোটিশের ওপর আলোচনায় আরো অংশ নেন সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুর রহমান, আবদুল মান্নান, আবদুর রহমান, জুনায়েদ আহমেদ পলক, ডা. আমানুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের মইনউদ্দীন খান বাদল, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম, জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান ও মাহজাবিন মোর্শেদ।

আলোচনার সময় ভিভিআইপি গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর হাত থেকে নারী-শিশু, নিরীহ মানুষ কেউ-ই রেহাই পাচ্ছে না। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য। সেই জনগণকে যদি পুড়িয়ে মারা হয়, সেটাকে কি রাজনীতি বলে? বিএনপি নেত্রী রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস চালাচ্ছেন।’

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) কেন বাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে আছেন? শোনা যাচ্ছে ওই বাড়িতে ৫০/৬০ জন মানুষ আছে। এতো মানুষ ওই অফিসে কী করছে? উনি কাদের পাহারা দিচ্ছেন? কেউ কেউ বলছেন ওই অফিসে নাশকতাকারী সন্ত্রাসী-জঙ্গিরাও থাকতে পারেন। তাই সেখানে জঙ্গি-সন্ত্রাসী আছে কি না তা দেখা উচিৎ। উনি অফিসে বসে টেলিফোন করে করে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দিচ্ছেন। কারা এসব নাশকতা-সহিংসতার অর্থের যোগান দিচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।’

এসএসসি পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেখানে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, সেখানে কীভাবে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা দিতে পাঠাবো? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে পারে সেজন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করে এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দিয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিএনপি নেত্রীর যদি এতটুকু মনুষ্যত্ব থাকতো তবে হয়তো একটা রিস্ক (ঝুঁকি) নিতে পারতাম। কিন্তু মনে হচ্ছে বিএনপি নেত্রী ও তার দল বিএনপি-জামায়াত সুস্থ অবস্থায় নেই। এদের মানষিক বিকৃতি ঘটেছে বলেই যেকোন কাজ করতে পারে। বিএনপি নেত্রীও এখন উন্মাদের মতো ব্যবহার করছেন। তাই সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর নিরাপত্তার কথা আমাদের ভাবতে হচ্ছে। আমাদের শিশুদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে আসেননি। তাকে নির্বাচনে আনার জন্য নিজে টেলিফোন করেছি। সংলাপের আহ্বান জানিয়েছি। এমনকি সর্বদলীয় সরকার গঠন করে যেকোন মন্ত্রীত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েও তাকে নির্বাচনে আনতে পারিনি।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘বিএনপি নেত্রীর ছেলে মারা গেলে সমবেদনা জানাতে দেখতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর গেটে তালা দিয়ে ঢুকতে না দেয়ার মতো অভদ্র আচরণও আমার সঙ্গে করা হলো। বিএনপি নেত্রীর জনগণের প্রতি এতটুকু দরদ বা ভালোবাসা থাকতো তবে পরীক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে এমন খেলা খেলতো না। বিকৃত মানষিকতা নিয়েই উনি জনগণের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করছেন। এ কারণে শিশুদের নিরাপত্তার কথা ভাবতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। দেড় মাস ধরে ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারছে না। পড়াশোনার পথ বন্ধ করে দিয়ে খালেদা জিয়া তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। আমরা চাই সকল শ্রেণী-পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, এই উম্মাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। পরীক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা করতে হবে। দিনের পর দিন হরতালের নামে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য কাজ যারা করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’



মন্তব্য চালু নেই