পুলিশ প্রত্যাহার আর বিএনপি কর্মীদের দর্শকের ভূমিকা

খালেদার গাড়িবহরে হামলাটি ‘নাটক’ নাকি ‘পরিকল্পিত’?

আকষ্মিক পুলিশি নিরাপত্তা প্রত্যাহারের কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটলো। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারে ব্যস্ততম এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় যাওয়া খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এর আগে সোমবার সকাল ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র সামনে থেকে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সাত সদস্যকে সরিয়ে নেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
খালেদার গুলশানের বাসা২তিনি জানান, পুলিশের সাত সদস্য ম্যাডামের বাসার সামনে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। আজ (সোমবার) সকাল ৭টার দিকে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।

পরে সোমবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র ড. আসদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার পর তিনি (খালেদা জিয়া) নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’
বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের ঠিক কয়েক ঘন্টার খালেদার গুলশানের বাসামধ্যেই দলীয় প্রধানের গাড়ি বহরে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটলো। বিভিন্ন মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজ, স্টিল ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানান, বেশ কয়েকজন যুবক প্রকাশ্যে লাঠিসোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে হামলা ও কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এসময় প্রথমে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও পরে ওই সকল যুবকদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। তবে এসময় কেউ আটক হয়নি।

72275_leadএর আগে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে সোমবার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বের হয়। গুলশান-২, বনানী, মহাখালী ফ্লাইওভার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে বিজয় স্মরণীর মোড়ে উপস্থিত হয় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। এরপর গাড়িবহরটি ফার্মগেটের উদ্দেশে রওনা দেয়। সাড়ে ৫টার একটু আগে বহরটি কারওয়ান বাজারে উপস্থিত হয়। এরপর খালেদা জিয়া গাড়ি থেকে নেমে গণসংযোগ শুরু করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট শামসুল রহমান শিমুল বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরাও (সিএসএফ) উপস্থিত ছিলেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যকে তার বহরে দেখা যায়নি।
a8168932c7fddfba981265e28004190f-Khelaঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে তৃতীয় দিনের মতো প্রচারণায় নেমে খালেদা জিয়া রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ান বাজারে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। সেখানকার ব্যবসায়ীদের কাছে তিনি তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ভোট চান। খালেদা জিয়া এসময় বলেন, ‘চোরদের ভোট দেবেন না। সারা দেশে তারা শুধু চুরি আর চুরি করছে। আপনারা তাবিথ আউয়ালকে ভোট দেবেন।’ বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক খালেদা জিয়ার গাড়িবহর লক্ষ্য করে ইট ছুড়ে মারে।

এছাড়া লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে বেশ কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করা হয়।
khaledazia1429534369তবে খালেদা জিয়া নিরাপদ ও সুস্থ আছেন। পরে তার গাড়িবহর মগবাজারের উদ্দেশে কারওয়ান বাজার ত্যাগ করে। ওই ঘটনায় ফারুক, ফজলুল করিম এবং খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত অপর একটি গাড়ির চালক শাহেদ সহ কয়েকজন আহত হন। তাদের ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে রবিবার উত্তরায় গণসংযোগকালে খালেদা জিয়ার প্রচারণায় আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বাধা দেন।

এদিকে, গত কয়েক দিন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে খালেদা জিয়ার প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ বক্তব্য রাখেন।
শনিবার বিকেল ৫টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের লাকসাম হতে চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ডাবল রেললাইনে ট্রেন সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন, লাকসাম-আখাউড়া ৭১ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর ও চট্টগ্রাম স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং সমাপ্ত কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯২ দিনে হরতাল অবরোধের নামে জ্বালাও-পোড়াও করে আর মানুষ পুড়িয়ে মেরে দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছেন তিনি। এতে দেশের কি লাভ হয়েছে, তিনি কি পেয়েছেন? ব্যর্থ হয়ে তিনি আদালতেও হাজিরা দিলেন, বাসায়ও ফিরলেন। এতো মানুষ হত্যা আর সম্পদ ধ্বংসের জন্য তাকে জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি নেত্রী রাস্তায় নামলে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তিনি কেন হরতাল-অবরোধ করে মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছেন।

রোববার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন,‘গত তিন মাস ধরে বিএনপি নেত্রী পেট্রোলবোমা ও ককটেল নিক্ষেপ করে জনগণকে হত্যা করেছেন এবং বাস পুড়িয়েছেন। সে একই হাত দিয়ে তিনি এখন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট চাচ্ছেন। তিনি কীভাবে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীর ‘বাস’ প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন? তথাকথিত আন্দোলনের সময় তিনি বাস পুড়িয়েছেন।’

এদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে বিএনপি নেত্রী যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করেছে সেই ‘নাটক’ বন্ধের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর তদন্তসাপেক্ষে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

অপরদিকে, হামলার ঘটনাটি ‘নাটক’ নাকি ‘পরিকল্পিত’ সেই বিষয়ে সন্দিহান সাধারণ মানুষ ও রাজনীতি সচেতনরা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়ার সরকারি নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি যেমন সন্দেহজনক তেমনি হামলার সময় স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপার্সনের সামনে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ‘দর্শক’ এর ভূমিকাও সন্দেহজনক বলে মনে হয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর।

তারা জানান, নিজেদের নাটক নাকি প্রতিপক্ষের পরিকল্পিত যেটাই হোক ব্যস্ততম ওই এলাকায় হামলা-ভাংচুরের ঘটনাটি সত্যিই দূ:খজনক। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চায় জোর করে চাপিয়ে দেয়া ‘আন্দোলন’ যেমন জনসম্পৃক্ততা পায় না তেমনি গণতন্ত্রের অন্যতম হাতিয়ার ‘নির্বাচন’ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ ভাবে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করাও জরুরী।

আরো পড়ুন :

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা (ভিডিও দেখুন)



মন্তব্য চালু নেই