খালেদার গাড়িবহরে বারবার হামলায় সিএসএফের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর গালভরা নাম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফের (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হয়েছে সিএসএফ (চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স)। কিন্তু গত তিন দিনের তিনটি ঘটনায় সিএসএফের ভূমিকা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা যায়, সিএসএফের সদস্যদের বেশিরভাগই সেনাবাহিনী ও পুলিশের সাবেক সদস্য। তারা বেশ লম্বা। বডিও ভালো। কিন্তু কাজে যে তারা তেমন কর্মক্ষম নয়- এটি প্রমাণ হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
সোমবার কারওয়ানবাজারে খালেদা জিয়ার ওপর হামলায় দেখা গেল ছাত্রলীগ-যুবলীগ অন্তত ১৭টি গাড়ি ভাংচুরে সক্ষম হয়। সিএসএফের এক সদস্যের কপাল বেয়ে রক্ত ঝরার ছবিও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। পরের দিন মঙ্গলবার ফকিরাপুলে খালেদা জিয়া আক্রান্ত হন। বুধবার আক্রান্ত হয়েছেন বাংলামটরে।
বাংলামটরে আক্রমণের সময় দেখা যায় সিএসএফের সদস্যরা নিজেদের আত্মরক্ষায় ব্যস্ত। মাটিতে ফেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের পেটাচ্ছে।
বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘আমি বুঝি না এরা (সিএসএফ) আসলে কী করছে? খালেদা জিয়া কোথায় যাবেন, সেখানকার পরিস্থিতি কী, এসব জানাটা সিএসএফের কাজের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু এসব জেনে তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকছেন বলে মনে হয় না।’
তিনি বললেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চেয়ে খালেদা জিয়াই সন্ত্রাসী মোকাবেলা করছেন ঠান্ডা মাথায়। তিনি শতভাগ ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আছেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, যতই আক্রমণ আসুক না কেন, খালেদা জিয়া তার নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রাখবেন। কারওয়ানবাজারের হামলার পর তিনি মগবাজারে গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন। ফকিরাপুলে হামলার পরও প্রচার থামাননি তিনি। বাংলামটরে হামলার পর জুরাইন গিয়ে প্রচার চালিয়েছেন।
খালেদা জিয়ার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন মনে করেন, যুবলীগ-ছাত্রলীগের এসব হামলায় তাদের ‘আসল’ চরিত্রকে উন্মোচিত করছে। খালেদা মনে করেন, সরকারদলীয় লোকদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের ভোট আরো বাড়াবে। তাছাড়া কূটনৈতিক মহল এসব দেখে সরকারের ‘আসল’ চরিত্রটি বুঝতে পারবেন।
খালেদার গাড়িবহরে ফের ছাত্রলীগের সশস্ত্র হামলা
রাজধানীর বাংলামোটরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে বুধবার আবারো সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। ছাত্রলীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ কাইয়ূম ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তা সামিউল হক আহত হয়েছেন। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বাংলামোটর সিগনালে আটকা পড়ে। এ সময় অতর্কিত তার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা মশিউর রহমান রুবেল ও মামুনুর রশীদসহ নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে গাড়িবহরে হামলা চালান।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য, হামলায় খালেদার গাড়ির বাম পাশের পেছনের দিকের কাঁচ ভেঙে যায়। তিনি গাড়িতে পেছনের সারির আগের সারিতে বসে ছিলেন। তার নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের গাড়িতেও হামলা চালিয়ে এলোপাতাড়ি ভাংচুর করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত খালেদার গাড়ি সামনে এগিয়ে গেলে ধাক্কায় ছাত্রলীগের দুই কর্মী পড়ে গিয়ে আহত হন। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খালেদার এক নিরাপত্তাকর্মীর ওপর চড়াও হন। পরে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর নয়া পল্টনের দিকে চলে যায়।
গত মঙ্গলবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী মির্জা আব্বাসের পক্ষে ফকিরাপুলে গণসংযোগ শেষে নয়া পল্টনের দিকে আসার পথে কাঁচা বাজারসংলগ্ন এলাকায় সরকার-সমর্থকদের হামলার শিকার হয় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের ধাওয়া দেন।
এর আগে গত সোমবার প্রচারে নেমে কারওয়ান বাজারে খালেদা জিয়ার পথসভা ও গাড়িবহর সরকার সমর্থক নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছিল। ওইদিন তার দুটি গাড়ি ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীদের ৩টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। গত রোববারও উত্তরায় তিনি প্রচারে গিয়ে সরকার সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েন।
মন্তব্য চালু নেই