প্রধানমন্ত্রীকে বি. চৌধুরী :
খালেদাকে আরেকবার ফোন করুন
দেশের চলমান অবস্থা ও সঙ্কট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই, এ অবস্থার সমাধান করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবশ্যই সংলাপে বসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘চলমান সঙ্কট রাজনৈকিত নয়, জাতীয় সঙ্কট। দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে চালাতে হলে একবার কেন বার বার সংলাপের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ডাকতে হবে। কারণ আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। সঙ্কট থেকে কীভাবে উত্তরণ করতে হবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানেন। তিনি (শেখ হাসিনা) অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তিনি সবকিছু জানেন ও বোঝেন। কাজেই দেশের চলমান সঙ্কট কীভাবে উত্তরণ করতে হবে তা শেখ হাসিনার জানা আছে। তিনি ইচ্ছা না করলে তো সংলাপ হবে না। তবে দেশ, জাতি, দেশের কৃষক শ্রমিক ও সকল মানুষকে রক্ষা করতে হলে সংলাপের বিকল্প নেই। আপনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী, দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন তাই আপনাকেই এ সঙ্কটের সমাধান করতে হবে।’
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত ‘চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট- উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে সাবেক রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর কোনো নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন না কেন? তাই দেশের চলমান অবস্থার সমাধান করতে হলে আপনাকে সংলাপের ডাক দিতে হবে।’
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে তথাকথিত নির্বাচন আখ্যায়িত করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘কীভাবে ১৫৪ জন এমপি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এ নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন? পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম নির্বাচন কোনোদিন দেখিনি। বাংলার মানুষ অনেক সচেতন। তারা ভোটের হিসাব কড়ায় গণ্ডায় বুঝে নেবে।’
সংসদের বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিচিত্র বিরোধীদল, এরকম বিরোধী দল পৃথিবীর ইতিহাসে কোনোদিন দেখিনি। বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় কীভাবে সরকারের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন? তাদের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও (এরশাদ) আছেন। এটা কেমন বিরোধী দল?’
৫ জানুয়ারির আগে প্রধানমন্ত্রীর ডাকে খালেদা জিয়ার সাড়া না দেয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে হলে খালেদাকে আরেকবার টেলিফোন করতে তো প্রধানমন্ত্রীর বাধা নেই। দেশকে, দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
সাবেক এ রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘জাতীয় সঙ্কটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানেন না, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। উনি কোয়ালিফাইড। ইচ্ছা করলে পারেন, বুঝতে পারেন। সমাধান করতে পারেন। আর প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে তিন মাসের মধ্যে সমাধান করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো তিনি সমস্যার সমাধান চান কি না।’
সঙ্কট নিরসনের বিষয়ে বিকল্প ধারার সভাপতি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি হচ্ছেন দেশ পরিচালনায় একমাত্র জ্যেষ্ঠ নেতা। আপনাকেই বিরোধীদলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, বসতে হবে। দিস ইজ অনলি সলিউশন। দেশকে রক্ষা করতে হবে।’
সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘বোমা কে মারে আপনাদের ছাত্রলীগ-যুবলীগ না কি অন্য কেউ তা খুঁজে বের করুন। পেট্রোলবোমাবাজ ধরে আদালতে নিয়ে আবার জামিন দেয়া হয়। এরা কারা?’ বোমাবাজদের শনাক্ত করতে প্রধান বিচারপতিকে একটি কমিটি গঠন করার অনুরোধ জানান তিনি।
পেট্রোলবোমা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পেট্রোলবোমার বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বোমা কে মারে এটা খুঁজে বের করতে হবে। প্রধান বিচারপতি আপনি একটি কমিটি করে দেন এদের খোঁজ করার জন্য। বিচার বহির্ভুত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। এটার কারণও খুঁজে বের করতে হবে। এ হত্যাকাণ্ডের আসল ব্যাপার কী?’
র্যাবের ডিজি বেনজিরের প্রতি ইঙ্গিত করে সাবেক ওই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আপনাকে অস্ত্র দেয়া হয়েছে বিচারবহির্ভুত হত্যাকাণ্ডের জন্য নয়। এ হত্যাকাণ্ড বন্ধ করুন।’ তিনি এ ব্যাপারে আরো বলেন, ‘বর্তমানে সাত লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। কিছুদিন পর যদি ১৪ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাহলে দেশে শতকরা একজন করে মামলার আসামি হবেন। তখন বিশ্বরেকর্ড হয়ে যাবে।’
পেশাজীবীদের এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এম খালেদ আহমেদ, পেশাজীবী সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
মন্তব্য চালু নেই