খাম্বামুক্ত বিদ্যুৎ দিতে চায় সরকার
সড়কের ওপর তারের জট দূর করে এবার মাটির নিচ দিয়ে খাম্বামুক্ত বৈদ্যুতিক লাইন নিতে চায় সরকার। এজন্য ২০ হাজার ৫০১ কোটি ৫২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকা এবং হাতিরঝিল দিয়ে শুরু হবে এই পর্ব। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।
ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণাংশ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগরী ডিপিডিসির আওতাভুক্ত এলাকা। ঢাকার মধ্যে উত্তরা, মিরপুর, বাড্ডা ও গুলশানসহ উত্তরের এলাকাগুলো রয়েছে ডেসকোর অধীনে।
দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘শুরু থেকে এ পর্যন্ত বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইন মাটির ওপর দিয়েই নেওয়া হয়েছে। শুধু উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কিছু সঞ্চালন রয়েছে মাটির নিচে। সরবরাহ লাইনগুলো রাস্তার ওপর থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোথাও না কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের তার ছিড়ে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। থামগুলোতে তারের জট লেগে গিয়ে দৃষ্টিকটু দৃশ্যেরও অবতারণা হয়। এ কারণে মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের নেটওয়ার্ক তৈরির প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর পর এ কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটবে সারাদেশে।’
প্রকল্পটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি’। এ বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মাধ্যমে মাটির নিচে ক্যাবল নেটওয়ার্ক তৈরি করা হবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০১ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ৫ হাজার ৫৩৬ কোটি ৯৬ লাখ, প্রকল্প সাহায্য ১৩ হাজার ৮৪৪ কোটি ২৯ লাখ এবং ১ হাজার ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ডিপিডিসির নিজস্ব তহবিল থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পের আওতায় আন্ডারগ্রাউন্ড লাইনের পাশাপাশি ৫৩টি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন নির্মাণ করা হবে। সহজ শর্তে প্রকল্প সাহায্য দেবে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান। ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডও নিজ আওতাধীন এলাকায় একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
জানা গেছে, ডিপিডিসির আওতাধীন ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সরবরাহ লাইন ৫ হাজার ২১৩ কিলোমিটার, ট্রান্সফরমার ১৬ হাজার ৯১৮টি, সাব-স্টেশন ৬১টি (১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশন ১৪টি ও ৩৩/১১ কেভির সাব-স্টেশন ৪৭টি) এবং গ্রাহক রয়েছে ১০ লাখ ৫২ হাজার ৬৮ জন। গত বছরের এপ্রিলে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছিল ১ হাজার ৪৯৩ দশমিক ৩১ মেগাওয়াট।
রাজধানীর উলন থেকে ধানমণ্ডির পরিবাগ পর্যন্ত ডিপিডিসির ১৩২/৩৩ কেভি বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে মাটির নিচে। এর বাইরে মাটির নিচে আর নেটওয়ার্ক নেই। মাটির ওপরে রয়েছে ১৩২ কেভি লাইন ২২৮ কিলোমিটার এবং ৩৩ কেভি ৩৬৮ কিলোমিটার। প্রকল্পটির আওতায় এসব লাইন নিয়ে যাওয়া হবে মাটির নিচে।
যোগাযোগ করা হলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক রমিজ উদ্দিন সরকার রবিবার (২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পটির আওতায় আমরা ডিপিডিসি এলাকার ক্যাবল নেটওয়ার্ক মাটির নিচে নিয়ে যাবো। তবে প্রথমে ধানমণ্ডি ও হাতিরঝিল দিয়ে শুরু হবে বাস্তবায়ন কাজ। এরপর পর্যায়ক্রমে সব এলাকার লাইন আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে যাওয়া হবে।’
কবে কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘বাংলাদেশ ও চীনের উভয় সরকারের জি-টু-জি পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সে অনুযায়ী কোথায়, কীভাবে ও কারা কাজ করবে সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে আছে। এখন বাকি শুরু লোন অ্যাগ্রিমেন্ট। এই প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, ‘লোন অ্যাগ্রিমেন্ট হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।’
মন্তব্য চালু নেই