ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বেশি সুদে ঋণ!

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম সুদহারসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। আর বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক এই ঋণ দিচ্ছে ২৪ শতাংশ সুদে! সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ‘অতি মুনাফার’ লোভে তারা এটি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বেশ কিছু গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঋণ দেয়ার সময় সুদ হারের কথা লিখে দেয়া হচ্ছে। একই ব্যক্তি একবার সাড়ে ১৮ শতাংশ সুদে ঋণ পেলেও দ্বিতীয়বার নিতে হচ্ছে ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে। আবার এতো বেশি চার্জ নেয়া হচ্ছে যে, ঋণের বড় একটি অংশই কেটে রেখে দিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, আমি ব্র্যাক ব্যাংকের শ্যামপুর শাখা থেকে ‘অনন্যা’ নামের একটি এসএমই ঋণ নিয়েছিলাম ২০১১ সালে। আমার আবেদনে ৫ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদন হয়। এতে সুদহার ধরা হয় ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। যখন আমাকে টাকা দেয়া হয়েছে তখন প্রথম কিস্তির ১৮ হাজার ৩৫০ টাকাসহ বিভিন্ন চার্জ কেটে নিয়ে আমাকে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়।

তিনি জানান, দ্বিতীয়বার ২০১৩ সালে অনন্যা প্যাকেজের অনুকূলেই ৮ লাখ টাকা ঋণ নিতে গেলে তার অনুমোদন পত্রে সুদ হার লেখা হয় ২৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

আরো কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, যে ব্যবসা করি আমরা সেখানে কি রাতারাতি জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ করে দেয়া সম্ভব? আবার ব্যবসায়ে যেহেতু পুঁজির প্রয়োজন তাই ঋণ না নিয়েও উপায় নেই। এখন আমরা কী করবো?

এ ব্যাপারে ব্যাংকটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও তারা একইভাবে ঋণ বিতরণ করছে।

সুদহার কমানোর এত ডামাডোল এবং এসএমইদের এত এত সুযোগ সুবিধা দেয়ার মধ্যে কেন একটি ব্যাংক ২৪ শতাংশ সুদে এসএমই ঋণ বিতরণ করে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা বলেন, আসলে ওদের কস্ট অব ফান্ড একটু বেশি হওয়ায় তারা একটু বেশি সুদ নেয় এটা জানি। তারা এজেন্ট ব্যাংকিং চালু হওয়ার আগে থেকেই ইউনিট খুলে বিভিন্ন জায়গায় ঋণ বিতরণ করে। তবে ২৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ বিষয়টা একটু খটকার বিষয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাবো এবং বলবো তারা যেন একটি টিম পাঠিয়ে এর তদন্ত করে।

তবে এজেন্ট ব্যাংকিং এর যুগে বসে যদি কোনো ব্যাংক ইউনিট খুলে খরচ বাড়িয়ে বেশি সুদ নেয় তবে তা একটি চিন্তার বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ব্র্যাক ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, ‘অনন্যা’ একটি এসএমই ঋণ প্যাকেজ। যে কোনো ব্যবসার জন্য ২ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়। সহজভাবে ঋণ প্রসেসিং এবং ইনস্টলমেন্ট করা যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য দেয়া থাকলেও আসলে ঋণটি কত শতাংশ সুদে দেয় হয় তার কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির কাছে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় শুনেই ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোন রেখে দেন।

এদিকে ব্যাংকটি ঋণ ও আমানতের ব্যবধান অর্থাৎ স্প্রেড সীমায় কখনোই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানেনি। স্প্রেড সীমা ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের মধ্যে রাখার যে নিয়ম তা তারা বারবার ভঙ্গ করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫ সালের নভেম্বরে ব্যাংকটির স্প্রেড ছিল ৯ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্টে, অক্টোবরে ৯ দশমিক ৪, সেপ্টেম্বরে ৯ দশমিক শূন্য ৬, আগষ্টে ৮ দশমিক শূণ্য নয় এবং জুলাইয়ে ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।



মন্তব্য চালু নেই