ক্যানসার থেকেও হতে পারে কোমর ব্যথা!

কোমর ব্যথা অনেকেরই হতে দেখা যায়। অঙ্গবিন্যাসের কিছু অসতর্কতার কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে। আবার খুব জটিল কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।

প্রশ্ন : কোমর ব্যথার কারণগুলো কী কী?

উত্তর : একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যতজন মানুষ আছে পৃথিবীতে শতকরা ৮০ জন মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমরে ব্যথা হয়। তাহলে আমরা বুঝতেই পারছি, বিষয়টি অত্যন্ত প্রচলিত।

কোমরের ব্যথাগুলো আমরা যদি ভাগ করার চেষ্টা করি, সিম্পল (সাধারণ ব্যথা) একটি। বেশির ভাগ মানুষের কিন্তু সাধারণত এই কোমরে ব্যথা হয়। এই কারণ হলে এটা নিয়ে কিন্তু মোটেই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়। সে জন্য একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব প্রথমে রোগীর কাছে কিছু প্রশ্ন করে জেনে নেওয়া। এগুলো এমন যে ব্যথা কী কী কারণে হচ্ছে? আপনার কোমর ব্যথা কীভাবে শুরু হলো? কত দিন হচ্ছে? তীব্রতা কেমন? এটি কি শুধু কোমরেই থাকছে? একপাশে থাকছে নাকি, দুই পাশে থাকছে? এটা কি নিচের দিকে চলে যাচ্ছে? পায়ের পাতা পর্যন্ত যাচ্ছে? এর সঙ্গে কি আর কোনো উপসর্গ আছে—যেমন একটু জ্বর জ্বর?

তার পর রয়েছে ব্যথার তীব্রতা। কারো একটু কম, কারো একটু সহনীয়, কারো তীব্র। বয়সটা কেমন রোগীর, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর পর আছে যে রাতের বেলা বেশি হয়, না দিনের বেলা বেশি হয়? বিশ্রামের পরে বাড়ে, নাকি একটু পরিশ্রম করলে বাড়ে? ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন করলেই কিন্তু আমরা মোটামুটি কারণ সম্বন্ধে জেনে যেতে পারি। যেমন, সিম্পল পেইন (সাধারণ ব্যথা) অধিকাংশ মানুষের হবে। শতকরা ৮০ ভাগ মানুষেরই সিম্পল পেইন।

প্রশ্ন : এটি যে সাধারণ ব্যথা, সেটি বোঝার উপায় কী?

উত্তর : বোঝার উপায় হলো ইতিহাস। ব্যথাটা প্রথমে শুরু হয়, সাধারণত আমি একটি ভারী জিনিস হাতে নিতে গেলাম বা হঠাৎ একটি ভারী বস্তু ধরে টান দিলাম। হঠাৎ করে দেখা গেল, আমার কোমরে তীব্র ব্যথা হচ্ছে। এটা কিন্তু বেশির ভাগ সময় খুব সাধারণ ধরনের ব্যথা হবে। এই রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ ভাগ রোগী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে। আমরা কিছু করি অথবা না করি। কিন্তু এদের মধ্য থেকে একটি অংশের পুরোপুরি কমবে না। ব্যথা দেখা যাবে দীর্ঘদিন ধরে থাকছে। তিন সপ্তাহ, চার সপ্তাহের পরেও থাকছে।

এদের মধ্যেও যাদের সিম্পল পেইন, তাদের একটি অংশের দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা হতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে দেখা গেল হয়তো ব্যথা চলে গেল, আবার এলো। বেশ কিছুদিন ব্যথা নেই, আবার ব্যথা। এসব বিষয় আমাদের চিন্তা করার প্রয়োজন আছে।

তবে খারাপ কিছু কারণও আছে কোমর ব্যথার। যেমন কারো কারো টিউমার বা ক্যানসার জাতীয় রোগও কিন্তু কোমরে হতে পারে। ব্যথার কারণ হিসেবে সেটিও থাকতে পারে।

এর পর তরুণ বয়সের ছেলে ও মেয়েদের হয় স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিস। এ ধরনের রোগীদের ব্যথাটা রাতের বেলা বেশি হয়। ঘুম থেকে উঠলে সকালবেলা বেশি হয়। রাতের বেলা অনেক সময় ব্যথার কারণে ঘুম ভেঙে যায়। এভাবে আমরা ক্লিনিক্যালই, অর্থাৎ প্রশ্ন করে রোগীকে ধারণাটা নিয়ে নিতে পারি। তারপর ক্ষেত্রবিশেষে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের মূল কারণটা বের করতে হয়। যেমন আমাদের দেশে আরেকটি রোগের কারণেও এ ব্যথা হয়, আমরা বলি টিউবারকলোসিস। টিবি বা টিউবারকলোসিস রোগেও কিন্তু রোগী কোমরে ব্যথা নিয়ে আসতে পারে।

তাই একজন চিকিৎসকের দায়িত্ব হলো প্রথমে কারণটা নির্ধারণ করা। কিছু ইতিহাস ও পরীক্ষা করালে চিকিৎসক বুঝতে পারবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ কিছু পরীক্ষা করে রোগ বোঝা যায়। যেমন সাধারণ কিছু এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা। আর খুব কম রোগীর ক্ষেত্রে আসলে এমআরআই করা দরকার হয়। কোমর ব্যথা একজনের হলেই যে আমাকে এমআরআই করতে হবে, এই ধারণা মোটেও সঠিক নয়।

প্রশ্ন : তাহলে এমআরআই কখন দরকার হয়?

উত্তর : যদি আমরা বুঝতে পারি এই রোগীর সাধারণ কারণে ব্যথা হচ্ছে না, তাহলে আমরা অবশ্যই এমআরআই করার পরামর্শ দিতে পারি। কোমরে ব্যথা যাদের আছে, এর একটি অংশ শুধুই কোমরে ব্যথা। আর আরেকটি দলের রোগীদের কিন্তু কোমর থেকে পায়ের পাতা অবধি ব্যথা চলে যায়। একে আবার আমরা আরেকটি ভিন্ন নামে ডাকি। আমাদের একটি বড় স্নায়ু আছে শরীরে, স্নায়ুতে হাড়গুলোর ভেতর থেকে বেরিয়ে কিছু জিনিস খোঁচা দেয়, তখন রোগীরা ওই কষ্ট অনুভব করে। রোগী হয়তো ভালো আছেন, বিশ্রাম নিচ্ছেন তখন, হাঁটতে গেলে কিছুদূর যাওয়ার পরে হয়তো দেখা যাচ্ছে কোমর থেকে পায়ে ব্যথা করছে।

প্রশ্ন : আপনাদের কাছে এসব রোগী কী অভিযোগ নিয়ে আসে? পায়ে ব্যথা,নাকি কোমর থেকে পায়ে ব্যথা?

উত্তর : যারা এই হাঁটার সময় ব্যথা অনুভব করে, তাদের কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পায়ের ব্যথাই অভিযোগ থাকে। খুব কম ক্ষেত্রে হয়তো কোমরের ব্যথা নিয়ে উনারা বেশি চিন্তা করেন। দুটো দলের লোকেরই এখন চিকিৎসা আছে। চিকিৎসা করলে এসব সমস্যার সমাধান করা যায়।

তাহলে প্রথমে চিকিৎসকের দায়িত্ব হবে কারণ নির্ধারণ করা। নির্ণয় করার পরে চিকিৎসা করা। আরেকটি অন্যতম কাজ হবে চিকিৎসকদের, সেটি হলো রোগীকে কিন্তু বোঝাতে হবে, রোগটা কী? এই রোগের ভবিষ্যৎ কী? এই রোগের কী চিকিৎসা আছে? কী চিকিৎসা আপনার নেওয়া দরকার। অর্থাৎ রোগীকে এই রোগ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া। পরামর্শ দেওয়াটা চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন রোগীকে আমরা বুঝিয়ে যদি বলতে পারি, আপনার এই রোগটি সাধারণ এক ধরনের কোমর ব্যথা, আপনি এমনি এমনি ভালো হয়ে যাবেন, তিন থেকে চার সপ্তাহ পরে। তাহলেই কিন্তু উনি অনেকটা আশ্বস্ত হবেন। অবশ্যই এটা উনাকে তখন অনেক বড় একটি সাহস জোগাবে।

প্রশ্ন : চিকিৎসা-পরবর্তীকালে আপনাদের পরামর্শ কী থাকে?

উত্তর : সেসব ক্ষেত্রে আমরা রোগীদের বলি জীবনযাপনের পরিবর্তন করতে হবে। আপনার জীবনযাত্রার পদ্ধতির একটু গুণগত কিছু পরিবর্তনের দরকার আছে। যেভাবে বসা দরকার, যেভাবে দাঁড়ানো দরকার, যেভাবে হাঁটা দরকার, যেভাবে একটি ওজনকে হাতে নেওয়া দরকার, এগুলো অনেক সময়ই আমরা মনে রাখি না। এই জায়গাগুলো পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে শিক্ষা দেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এরপর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে, এদের জন্য ব্যায়াম। এই ব্যায়ামগুলো যদি একটু করেন, তাহলে আবার কোমরে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এনটিভি



মন্তব্য চালু নেই