কোনো নির্বাচনেই আর লড়তে পারবে না জামায়াত!

নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ হারিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াতে ইসলামী। তবে দলীয় প্রতীকে না হওয়ায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তাদের প্রার্থীরা ঠিকই অংশ নিচ্ছে। এবার সে সুযোগও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কারণ, সরকার জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনগুলোও দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরই মধ্যে আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এটা চূড়ান্ত হলে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা বা জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী দলটির অংশ নেয়ার আর কোন সুযোগ থাকবে না।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকোর্টের রায় যতদিন পর্যন্ত বহাল আছে ততদিনে জামায়াত দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।’

আপিলে হাইকোর্টের রায় বাতিল হলে জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাবে কি না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ আমলে নিয়েই আমরা নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওরা যদি আপিল করে থাকে এবং যদি আপিলে জিতে তাহলে নিবন্ধন ফেরত পাবে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরও বেশ কয়েকজনের দণ্ড কার্যকর এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। দলের নেতা-কর্মীরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেবল দলের নেতারা না, দল হিসেবেও জামায়াত যে যুদ্ধাপরাধ করেছে, তারও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছে সরকার। জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিও জোড়াল হয়েছে। তবে সরকার দলটি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এই অবস্থায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আইন পাস হলে কার্যত জামায়াতের কোন প্রকাশ্য ভূমিকাই থাকবে না রাজনীতিতে।

২০১৩ সালে ১ আগস্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে জামায়াত দলীয়ভাবে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

তবে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে জামায়াত। সেটির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে, জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়াকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়।

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার সরকারের সিদ্ধান্তে ভিন্ন ষড়যন্ত্র দেখছে জামায়াতের শরিক বিএনপি। তাদের ভাষ্য, সরকার দেশের আসল সমস্যা সমাধান না করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নীল নকশার অংশ হিসেবে সরকার স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে চাইছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট চলছে। এই সংকট নিরসনে জাতীয় নির্বাচনই জনগণের একমাত্র চাওয়া। সরকার জনগণের দাবি না মেনে দেশকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিরাজমান বিভাজন আরও বিস্তৃত করতে সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেয়ার পাঁয়তারা করছে।’

তবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তবে তিনি চান, কেবল নির্বাচনের বাইরে নয়, পাকিস্তানের দোসর এই দলটি যেন বাংলাদেশে রাজনীতিই করতে না পারে সে জন্য দলটি নিষিদ্ধি করার দাবি তার। শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘জামায়াতকে শুধু নির্বাচনে অযোগ্য করলে হবে না। তাদেরকে নিষিদ্ধ করে দিতে হবে। কারণ তারা সন্ত্রাসী সংগঠন, নির্বাচন দূরে থাক রাজনীতি করারই তাদের অধিকার নেই।’ ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই