কোনটা সত্য- আলোকচিত্রী না ডিএমপির ফেসবুক?

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে লেকের পাশে এক শিশুকে নির্যাতনের ছয় দিন পরও সেই পুলিশ সদস্যকে শনাক্ত করতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে ডিএমপির ফেসবুক পেজে দাবি করা হচ্ছে, সেখানে কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। বরং দুই শিশুকে মারামারি থেকে নিরস্ত করতে তাদের সরিয়ে নিচ্ছিল পুলিশ।

চন্দ্রিমা উদ্যানের লেকের পাড়ে এক শিশুকে নির্যাতন করছেন একজন পুলিশ সদস্য, পাশে বসে সেই দৃশ্য দেখেন তার কয়েকজন সহকর্মী-এমন কয়েকটি ছবি আলোকচিত্রী সৈকত মজুমদার গত মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুকে পোস্ট করার পর তা কিছুক্ষণের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়।

ছবিগুলো দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। শিশু নির্যাতনের অভিযোগে এসব পুলিশ সদস্যের শাস্তি চেয়েছেন অনেকে। অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারীই মন্তব্য করেছেন, “পুলিশ সদস্যরাই যদি এমন করে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”

আলোকচিত্রী সৈকত মজুমদার জানান, “ছবিগুলো গত ২১ এপ্রিল তোলা। ওই দিন দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় এই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন তিনি। এরপর পুলিশ সদস্যদের কাছে এই ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, “এ লেকে শিশুদের গোসল করা বন্ধ করতে আমরা ১৩ জন পুলিশ সদস্য এখানে কাজ করছি। কিন্তু শিশুরা কিছুতেই আমাদের কথা শুনতে চায় না। তাদের গোসল করা বন্ধ করতে মাইরই একমাত্র ওষুধ। তাই একজনকে ধরে শাস্তি দিছি।”

কিন্তু পুলিশ দাবি করছে, ঘটনা তা নয়। এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. মারুফ হোসেন সরদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রকৃত ঘটনা কি আপনি জানেন? আপনি ডিএমপির ফেসবুকে দেখেন, প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবেন।”

এই ঘটনা সম্পর্কে ডিএমপির ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে: “আপনারা যারা এই ছবিটা নিয়ে এত কথা বলছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ভাই… আসল ব্যাপারটা না জেনেই আমরা হয়তো অনেক কিছু ভেবে বসে আছি। কিন্তু প্রকৃত ঘটনাটা ভিন্ন।

“যারা ওখানে ছিলেন তারাই অনেকে বলেছেন যে… দুটি পথশিশু ঐ POLICE সদস্যদের সামনে একে অপরের সাথে মারামারি করছিলো, এটা দেখে ঐ POLICE সদস্য ঐ ছেলেটীকে হাত ধরে টেনে সরিয়ে দিচ্ছিল, এক পর্যায় ঐ ছেলেটি ভয় পেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং সাথে হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করে।

“প্রিয় পাঠক আমরা না বূঝে, না ভেবেই অনেক কথা বলি। আজকে যদি ঐ ছেলে দুটি মারামারি করে আহত হতো তখন কিন্তু আপনারাই বলতেন POLICE সামনে দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু কোনোকিছুই করেনি।

“যাই হোক, তারা (পুলিশ)যদি আসলেই এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র দোষ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা People oriented policing এ বিশ্বাস করি, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে জনগণের সেবা করে থাকি। তাই এখানে অন্যায় করলে কোনো police সদস্য পার পেতে পারে না। তাকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

-ধন্যবাদ।”

সৈকত মজুমদারের ছবিতে দেখা যায়, রাজধানী চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তার পাশে বসে পথশিশুকে মারধর করছেন এক পুলিশ সদস্য। কখনো গলা টিপে, কখনো আবার মুখ চেপে ধরে শিশুটিকে জুতাপেটা করছেন ওই পুলিশ সদস্য। আর শিশুটি কান্নাকাটি করছে। ছবিতে শিশুটিকে নির্যাতনের সময় পাশে আরো চার পুলিশ সদস্যকে নির্বিকার বসে থাকতে দেখা যায়।

যে পুলিশ সদস্যকে দেখা যায় শিশুটিকে মারতে তার বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোপাল গণেশ বিশ্বাস বলেন, “চন্দ্রিমা উদ্যানে অনেক স্থান থেকে পুলিশ এসে দায়িত্ব পালন করেন। আমি এখনো পর্যন্ত তাকে শনাক্ত করতে পারিনি। তবে আজকে বিষয়টি দেখব। ”

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও জোনের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, “সেখানে অনেক স্থান থেকে পুলিশ এসে দায়িত্ব পালন করে। কে এই কাজ করেছে তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি দেখছি।”



মন্তব্য চালু নেই