কীর্তিময়ী প্রেরণা নাদিয়া শারমিন

‘বিশ্বে যা কিছু মহান চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’- কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতার বিখ্যাত এ লাইনটিই নারীর মর্যাদাকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ।

সমাজজীবনে একজন নারীর ছোঁয়া থাকে প্রতিটি দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। ঘরে বাইরে কোথাও নারীকে ছোট করা বা তার অবদানকে অস্বীকার করার আর কোনো উপায়ই নেই।

যুগ যুগ ধরে এ দেশের নারীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে আসছেন বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া কামাল, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো মহীয়সী নারীরা।

আজকের দিনে আধুনিক বিশ্বে ঘরগৃহস্থালির কাজ সামলানোর পাশাপাশি স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। চাকরি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, সাংবাদিকতা এমনকি এভারেস্টও জয় করছেন বাংলাদেশের নারীরা।

বাংলাদেশের সেই নারীসমাজ যারা কিনা একসময় ঘরের বাইরে বের হতেন না, চার দেয়ালের মধ্যে নিজেদের গুটিয়ে রাখতেন। আজ সেই বাঙালি নারীই এভারেস্ট পাড়ি দিচ্ছেন। পুলিশ, পাইলট, সেনাবাহিনী, সাংবাদিকতা, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই অনন্য দৃষ্টান্ত রাখছেন তারা।

এদের মধ্যে সাংবাদিকতা পেশায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে সবার সামনে হাজির হয়েছেন সফল নারী নাদিয়া শারমিন। সম্প্রতি সফল সাহসী নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন অর্জন করেছেন আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকতার পুরস্কার (ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড-আইডব্লিউওসি)।

একাত্তর টেলিভিশন চ্যানেলের অপরাধবিষয়ক সাংবাদিক এবং নারী অধিকারকর্মী নাদিয়া শারমিন। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকতার পুরস্কার পেলেন তিনি। ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ চলাকালে হামলার শিকার হন সাহসী সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ‘আইডব্লিউওসি’ বিশ্বের সেই সব অসাধারণ নারীকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কৃত করে থাকে, যারা নিজ নিজ সমাজকে বদলাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। শারমিন দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী হিসেবে এই সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করেছেন। সারা বিশ্বের আরো আটজন নেতৃস্থানীয় নারীর সঙ্গে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় একটা আনন্দের এবং গর্বের বিষয়।

সাংবাদিকতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। সাংবাদিকরা মানুষের অধিকারের কথা বলেন, সুযোগ-সুবিধার কথা বলেন, মানুষের বঞ্চনার ইতিহাস তুলে ধরেন পাঠকের সামনে।

বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নারীর পদচারণা শুরু মূলত ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই। সুদূরপ্রসারী পথচলায় এখন টেলিভিশন, রেডিও, অনলাইন ও পত্রপত্রিকা মিলিয়ে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে বাংলাদেশের নারীরা। প্রতিনিয়তই সাংবাদিকতায় নারীদের আগমন এবং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিচ্ছেন তারা।

তবে স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে যাওয়াটা বাংলাদেশের নারীর ক্ষেত্রে সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। সমাজের পরতে পরতে ছড়ানো নারীর প্রতি অমর্যাদাকর দৃষ্টিভঙ্গি নারীকে প্রতিনিয়তই টিকে থাকতে ও সামনে এগোতে বাধা দেয়। তবু প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

ঘরে-বাইরে হাজারো বাধা ঠেলে, যে নারীরা আপসহীনভাবে এগিয়ে যান অবিচল লক্ষ্যে, তারাই আমাদের কীর্তিময়ী। আমাদের প্রেরণা। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সেইসব কীর্তিময়ী নারীসহ সকল নারীসমাজকে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা আর অভিবাদন।



মন্তব্য চালু নেই