কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়া টাকা দিলে অনিয়মই নিয়ম

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি॥ নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসটি নানাবিধ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সাধারন শিক্ষকরা অবসরভাতা চাইতে গেলেই তাদের এই শুনতে হয় কত টাকা দিবেন। টাকা দিলে কাজ হয় না দিলে ঘুরতে হয় বছরের পর বছর। এমন অভিযোগ করেছেন অবসরে যাওয়া অনেক শিক্ষক। যারা ছাত্রছাত্রীদের ন্যায় পরায়ন ও আর্দশ মানুষ গড়ার শিক্ষা দিয়ে এলেন যুগ যুগ ধরে তারাই আবার দূর্নীতির কাছে মাথা নত করে ঘুষ দিয়ে ন্যায্য পাওনা নিতে বাদ্য হচ্ছেন। এছাড়াও মডেল টেস্ট পরীক্ষা, শিক্ষক বদলী বাণিজ্য, শিক্ষা সহায়ক ভাতা ও ব্যাক্তি মালিকানাধিন কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয়গুলো নিবন্ধনের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান।

অভিযোগে জানা গেছে, এ উপজেলায় ২০১৫-২০১৬ সালে অবসর নেয় সরকারী ও সদ্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৯ জন শিক্ষক । এসব শিক্ষকরা প্রত্যেকেই প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে অবসর ভাতার ফাইলে স্বাক্ষর নিয়েছেন। যারা টাকা কম দিতে চেয়েছেন তাদের ঘুরতে হয়েছে বছরের পর বছর।

এরকম ভুক্তভোগী কালিকাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন ছাবেদ আলী। তিনি ওই বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ১১ ই জুলাই অবসরে যান। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার চাকরী জীবনে ন্যায় নিষ্টার উর্ধে থেকে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা শিখিযেছি। তাদের সততার শিক্ষা দিয়েছি কিন্তু অবসরে গিয়ে আমার অবসর ভাতা উত্তোলনের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান ও উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার আনওয়ারুল ইসলাম আমার কাছে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। টাকা দিয়েও অনেক কাকুতী মিনতি করতে হয়েছে।
মাগুড়া পীর ফকিরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আবুজার রহমান বলেন, আমি অবসরে যাই ২০১৫ সালের ২৪ জুলাই । আমি অবসর ভাতা সব মিলে উত্তোলন করি ১২ লাখ ৩৫ হাজার। ভাতা উত্তোলন করতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীকে দিতে হয়েছে ২৫ হাজার টাকা । টাকা কম দিতে চাইলে কথাই বলেনা তারা দাড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা।

মন্থনা কালিকাপুর সদ্য সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক জহুরুল হক ক্ষোভের সাথে বলেন, আমি অবসরে যাই ২০১৫ সালের অক্টোবরে কিন্তু অবসর ভাতার আবেদন করার পর চুক্তি করে আমার কাছে দুই কিস্তিতে ৩৫ হাজার টাকা নেয় শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান। এরকম ভুক্তভোগী অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক জহুরা খাতুন, আব্দুস সামাদ, ও রস্তম আলী সহ আরো অনেকে।

সুত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ৬ হাজার ছাত্রছাত্রীর মডেল টেস্ট পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র সরবরাহের নামে প্রতি ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৩০ টাকা করে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও শিক্ষা সহায়ক ভাতার আবেদন কারী ৫১ জন নৈশ প্রহরীর কাছে প্রায় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করেন। সয়রা গন্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী আলমগীর হোসেন লাল বলেন, আমি আমার বাচ্চার জন্য শিক্ষা সহায়ক ভাতার জন্য আবেদন করলে শিক্ষা কর্মকর্তা আমার কাছে দুই হাজার টাকা দাবী করেন। অনেক কাকতি মিনতী করে একহাজার টাকা দিয়েছি। সুত্র আরো জানায়, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে নিয়ম অনিয়মের বালাই নেই। টাকা দিলে সব অনিয়ম নিয়ম হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, উত্তর দুড়াকুটি ময়দান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বিয়ে না করে দুটি ভুয়া সন্তানের পিতা সেজে প্রতি মাস এক হাজার করে টাকা ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। আনোয়ারুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার দুটি পোষ্য সন্তান আছে তাদের লেখা পড়ার খরচের জন্য আমি শিক্ষা সহায়ক ভাতা নেই। এদিকে যত্রতত্র ব্যাঙ্গের ছাতার মত গড়ে উঠা বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম , নার্সারী , প্রিপারেটরি, ও কিন্ডার গার্টেন পদ্ধতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো নিবন্ধনের নামে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাছাড়া প্রতিমাস শিক্ষকদের সুবিধা জনক বিদ্যালয়ে বদরী বাণিজ্য করে ধনকুবের বনে গেছেন ওই কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী কাজ করি টাকা নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা।

উপজেলা হিসাব রক্ষন অফিসার এ এইচ এম আনওয়ারুল ইসলামের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।



মন্তব্য চালু নেই