“কিছু হইলে গাড়ি বন্ধ, হামড়া এলা কোনঠে যামো”

শরিফুল ইসলাম ঠাকুরগাঁও থেকে: কিছু হইলে কথায় কথায় গাড়ি বন্ধ, হামড়া এলা যামো কোনঠে। হামার কি দোষ। হামরা কি করছি। এমন আকুতি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য কাউন্টারে বসে থাকা আঁকচা গ্রামের শামসুল ইসলাম।

ঢাকায় এক গার্মেন্টসে কাজ করেন শামসুল ইসলাম। তার বাসা ঠাকুরগাঁও আঁকচা গ্রামে। ছুটি পেয়ে চারদিনের জন্য বাসায় এসে এখন পড়েছেন মহাবিপদে। সময়মতো কাজে না গেলে আবার চাকরি হারাতে হবে। এমন ভোগান্তি ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের এখন নিয়মিত বিষয় হয়ে গেছে।

কিছু হলেই ঠাকুরগাঁও মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হয়। সাধারণ জনগণ তাদের কাছে এক প্রকার জিম্মি হয়ে গেছে। অপরদিকে প্রশাসন পালন করছে নিরব ভূমিকা।

ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জন্য কোচ প্রতি ১৫০ টাকা চাঁদা দিত কোচ মালিকরা। কিন্তু সম্প্রতি কোচ প্রতি চাঁদার হার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকা করে শ্রমিক ইউনিয়ন।

এতে অন্যান্য গাড়ির মালিকরা রাজি হলেও হানিফ পরিবহন কর্তৃপক্ষ তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে গাড়ি বন্ধের ঘোষণা দেয়।

বিষয়টি নিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ঠাকুরগাঁও জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু। তিনি শ্রমিকদের ২০০ টাকার পরিবর্তে গাড়ি প্রতি ১৮০ টাকা চাঁদা গ্রহণের প্রস্তাব দিলে শ্রমিকরা তা মেনে নেয়। শ্রমিকদের গাড়ি প্রতি ১৮০ টাকা চাঁদা প্রদানের বিষয়টি ঢাকা মালিক সমিতি ফেডারেশনে উত্থাপন করেন সংগঠনের সদস্য ও বাবলু পরিবহনের মালিক হাবিবুল ইসলাম বাবলু। কিন্তু ফেডারেশন তা প্রত্যাখান করে এবং ঠাকুরগাঁও রুটে সকল প্রকার কোচ চলাচল বন্ধের ঘোষণা দেয় ঢাকা মালিক সমিতি ফেডারেশন। ফলে বন্ধ হয়ে যায় এ রুটে সকল প্রকার কোচ চলাচল।

এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ঢাকাগামী চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থীসহ যাত্রী সাধারণ। অনেকে না জেনে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে কাউন্টারে এসে গাড়ি না পেয়ে ফিরে যাচ্ছনি। আবার নিরুপায় হয়ে অনেকে পার্শ্ববর্তী জেলা দিনাজপুর অথবা পঞ্চগড় গিয়ে ট্রেন অথবা কোচে ঢাকা রওনা দিচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন সীমা নেই।

যাত্রীদের দাবি অবিলম্বে মালিক-শ্রমিক মিলে এ পরিস্থিতির সমাধান করে আগের মতো কোচ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে।

এ ব্যাপারে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন জানান, `পার্শ্ববর্তী জেলা পঞ্চগড়ের গাড়ি প্রতি ২৭০ টাকা ও দিনাজপুরে ৩৩০ টাকা নেয় শ্রমিক সংগঠন। সেখানে আমরা গাড়ি প্রতি মাত্র ২০০ দাবি করেছিলাম।

পরবর্তীতে মালিক সমিতির সভাপতির অনুরোধে শ্রমিকরা ১৮০ টাকার প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। কিন্তু ঢাকা মালিক সমিতি ফেডারেশন গাড়ি প্রতি ৩০ টাকা বাড়তি না দিয়ে কোচ চলাচল বন্ধ রাখলে আমাদের কিছু করার নেই। মালিক সমিতি এতোদিন বাড়তি সুবিধা নিয়ে ব্যবসা করেছে উল্লেখ করে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, জেলায় দৈনিক ৫টি হানিফ গাড়ি চলাচলের অনুমতি থাকলেও বর্তমানে তারা ১৬ গাড়ি চালাচ্ছনি।

অপরদিকে নাবিল পরিবহনের অনুমতি রয়েছে ৩টি গাড়ির আর তারা চালাচ্ছেন ১০টি গাড়ি। এখন চাঁদার বিষয়টি মীমাংসা হলেও অনুমতির বাইরে একটি গাড়িও চলেতে দিবে না শ্রমিকরা। বাড়তি গাড়ি চালাতে হলে গাড়ি প্রতি ১ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে।

যার পঞ্চাশ হাজার পাবে শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাকি পঞ্চাশ পাবে মোটর মালিক সমিতি। তবে কয়েকটি নামমাত্র সেমি কোচ ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচল করছে। আজ থেকে সেগুলোও বন্ধ থাকবে বলে জানা গেছে।



মন্তব্য চালু নেই