কাস্টমস কর্মকর্তার বিয়ের ফাঁদ!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ছাত্রী আয়েশার (ছদ্ম নাম) সঙ্গে ২০০৪ সালে মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় বেনাপোল কাস্টমস হাউসের বর্তমান কর্মকর্তা হাসনাইন মাহমুদ আবিরের। এরপর দুইজনের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক।
একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে আবির। আর এ অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ভিডিও করে মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলেন তিনি। এভাবে দীর্ঘ কয়েক বছর কেটে যায়। এরপর আদাবর থানার শেখেরটেক এলাকার ৪ নম্বর রোডের ৪২ নম্বর বাসায় ৫ম তলার চিলেকোঠায় বাসা ভাড়া নেন আবির। পরে আয়েশাকে বিয়ে করেন।
কিন্তু বিয়েটি ছিল আবিরের সাজানো নাটক। অবশ্য তা জানতে পারেননি আয়েশা। আবিরের সঙ্গে কেটে যায় তার ৭ বছর। ততক্ষণে আয়েশা জানতে পারেন তার সঙ্গে কথিত বিয়ের পর শাহ জেরিন মৌ ও সাদিয়া রহমান ওরিন নামে আরো দুই মেয়েকেও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বিয়ের নামে নাটক করে আবির। বিষয়টি জানার পর বিয়ের রেজিস্ট্রিশন চাওয়ায় আবির সবকিছু অস্বীকার করে আয়েশাকে বাসা থেকে বের করে দেন।
রাজধানীর আদাবর থানায় এক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মেয়েটির অভিযোগ থেকেই এ তথ্য পাওয়া যায়।
পরে দিশেহারা মেয়েটি আশ্রয় নেন একটি মানবাধিকার সংগঠনে। সংগঠনের আইনী প্রক্রিয়া শুরু করার পর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবির নিজের বন্ধুমহল ও আদাবর থানার এক উপ-পরিদর্শকের মাধ্যমে আয়েশাকে থানায় ডেকে এনে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি নিষ্পত্তির চেষ্টা চালান। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ না হওয়ায় গ্রামের বাড়িতে পুলিশের মাধ্যমে মেয়েটির বাবাকে শাসান।
এদিকে আবির মেয়েটির সঙ্গে বসবাসকালীন সব সাক্ষ্য প্রমাণ মুছে ফেলতে সংশ্লিষ্ট ভাড়া বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে ডিবি পুলিশ দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে চাকরিচ্যুত করেছেন। ২৯তম বিসিএসের আগে ২৮তম বিসিএসে এএসপি হিসেবে যোগ দেয়ায় আবিরের অধিকাংশ অ্যাডিশনাল এসপি বন্ধু রয়েছে। তাদের সাহায্যেই প্রশাসনিক চাপ তৈরি করতে পারছে বলে অভিযোগ করেন আয়শা।
হুমকির ভয়ে ঘরে কোণঠাসা হয়ে থাকা আয়েশা অবশেষে বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে আবিরকে প্রধান আসামি করে গতকাল শনিবার একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নম্বর-৯০(৪)১৪।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ফুঁসলিয়ে নিয়ে আবির তাকে ধর্ষণ করেছেন। এরপর গোপন সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করা হয়েছে। অবশেষে তার চাপে বিয়ে করলেও পরে তা অস্বীকার করে আবির।
বিষয়টি নিয়ে আদাবর থানা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে বাসাটির দারোয়ান নিশ্চিত করেছে তারা এ বাসায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ছিলেন।’
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ম্যানেজার (লিগ্যাল সেল) অ্যাডভোকেট সোহেল রানা আকন্দ বলেন, ‘এ ঘটনার সত্যতার বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছি এবং আবিরের শেখেরটেকের বাসায় গিয়ে বাড়ির মালিক, দারোয়ান ও প্রতিবেশিদের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বসবাসের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। একইভাবে মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতার মেয়ের বসতবাড়ি ও আবিরের কর্মস্থল যশোর বেনাপোলে গিয়েও তা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে করে ২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর ও গ্রীন লাইন গাড়িতে ঢাকা ও যশোর তাদের যাতায়াতের একাধিক প্রমাণাদি আমরা পেয়েছি।’
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত হাসনাইন মাহমুদ আবির বলেন, ‘এ মেয়ের অভিযোগ মিথ্যা। আমি তাকে চিনতাম তবে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এ বিষয়ে আইনের সাহায্য নেবো।’


মন্তব্য চালু নেই