কার্বোহাইড্রেট সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন আপনার

কার্বোহাইড্রেট আমাদের শরীরে গ্লুকোজ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় যা আমাদের খুব দ্রুত এনার্জি প্রদান করে। এমাইলেজ নামক এনজাইম কার্বোহাইড্রেটকে ভেঙ্গে গ্লুকোজে পরিণত করে। আমাদের শরীর ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য এই গ্লুকোজকে সংরক্ষণ করে লিভার ও মাংসপেশিতে। জটিল ও সহজ এই দুই ধরণের কার্বোহাইড্রেট আছে। জটিল প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় শিম জাতীয় খাদ্যে। সহজ প্রাকৃতিক কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় ফল ও শাকসবজিতে। এছাড়াও পরিশোধিত খাদ্য যেমন- ময়দা, মিস্রি ও সাদা চিনিতে পাওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেট নিয়ে কিছু প্রচলিত ধারণা আছে যা আসলে ঠিক নয়। আজ এমনই কয়েকটি প্রচলিত ভুল ধারণা ও সঠিক তথ্য জেনে নেই চলুন।

মিথ১ : কার্বোহাইড্রেট আপনার জন্য ভালো নয়
কিছু কার্বোহাইড্রেট আছে আমাদের জন্য খারাপ আবার কিছু আছে উপকারি। তাই সব কার্বোহাইড্রেট আপনার জন্য ভালো নয় এই কথাটি ঠিক নয়। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটে যেমন- সাদা পাউরুটি, বিস্কুট ও ক্যান্ডিতে চিনি থাকে এবং এতে তেমন কোন পুষ্টি উপাদান থাকেনা। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট অস্বাস্থ্যকর কারণ এরা ক্যালরি প্রদান করে এবং এতে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবারের ঘাটতি থাকে। এছাড়াও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটের গ্লিসামিক ইনডেক্স বেশি থাকে। এগুলো খেলে চিনি সরাসরি রক্তস্রোতে প্রবেশ করে এবং ব্লাড সুগার লেভেল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট শরীরে যেয়ে খুব দ্রুতই চিনিতে পরিবর্তিত হয়, ইনফ্লামেশন হয় এবং বয়স বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। এজন্যই পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ।

অপরদিকে অপরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট প্রচুর পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। অপরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস যেমন- ফল ও শাকসবজি থেকে উৎপন্ন হয়। অপরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট আপনার উপকারি কারণ এতে আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল, ভিটামিন ও ফাইবার থাকে। এই পুষ্টিউপাদানগুলো ক্যান্সার ও ইনফ্লামেশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, পরিপাক তন্ত্র, হৃদপিণ্ড ও অস্থির উন্নতিতে সাহায্য করে। তাই বলা যায় যে, কিছু কার্বোহাইড্রেট আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ও প্রয়োজনীয়।

কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। কার্বোহাইড্রেট ছাড়া ফ্যাট ভালোভাবে ভাঙ্গতে পারেনা এবং কিটোনেস নামক উপজাত উৎপন্ন করে। যার ফলে কিটোসিস নামক অবস্থার সৃষ্টি হয়। কিটোসিস হলে হাইপারইউরেসেমিয়া ও ইউরিক এসিড অনেক বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। যা কিডনি পাথর, বাত, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট ডিজিজ, কোলন ক্যান্সার ও কিডনি রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

মিথ২ : কার্বোহাইড্রেট আপনাকে মোটা করে
ডা. কলিন ক্যাম্পবেল এর মতে, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার স্থায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ। বিষয়টি যুক্তি দিয়ে বিচার করতে পারেন কারণ কার্বোহাইড্রেট ফ্যাট এর চেয়ে অর্ধেক পরিমাণ ক্যালরি ধারণ করে।

মিথ৩ : ওয়ার্কআউটের পরে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ এড়িয়ে চলুন
আসলে ওয়ার্কআউট বা এক্সারসাইজের পরে কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ গ্লাইকোজেন সঞ্চয়কে পরিপূর্ণ করতে, পেশীর ভাঙ্গন রোধ করতে ও মাইক্রোটিয়ারস এর পুনর্নির্মাণে পেশীর কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের প্রয়োজন। তাই ব্যয়ামের পরে যে খাবারগুলো খাওয়া যায় তাহল- কলা, মিষ্টিআলু, বাদামীচাল, আপেল ও গাড় সবুজ শাকসবজি।

পরিশেষে বলা যায় আপনার কার্বোহাইড্রেট নির্বাচন করুন সতর্কতার সাথে। যদি ওজন কমাতে চান তাহলে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে শাকসবজি, ফল ও হোল ফুড গ্রহণ করুন।



মন্তব্য চালু নেই