তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদন

কারখানা পরিদর্শনে অসহযোগিতার অভিযোগ

অর্ধশতাধিক কারখানার বিরুদ্ধে পরিদর্শন কার্যক্রমে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে তৈরি পোশাক খাত মূল্যায়নে নিয়োজিত ইউরোপীয় ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি। চলতি মাসে প্রকাশিত জোটের তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

কারখানা পরিদর্শনের হালনাগাদ তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাকর্ডের তালিকাভুক্ত কারখানার মোট সংখ্যা ১ হাজার ৫৩১। এর মধ্যে অ্যাকর্ড পরিদর্শন শেষ করেছে ১ হাজার ২৮৮টিতে। পরিদর্শনের আওতাভুক্ত নতুন কারখানার সংখ্যা ১৭। এছাড়া অ্যাকর্ড ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতা জোট অ্যালায়েন্সের আওতাভুক্ত অভিন্ন কারখানার সংখ্যা ২২৬। প্রাথমিক পরিদর্শনকৃত কারখানায় শনাক্ত হওয়া ত্রুটি সংশোধনে সংশোধনমূলক কর্মপরিকল্পনা (ক্যাপ) দিচ্ছে অ্যাকর্ড। তবে সংশোধন কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে না অর্ধশতাধিক কারখানা।

জানা গেছে, প্রাথমিক পরিদর্শন শেষে পরবর্তী অগ্রগতি জানতে মোট ৯৩২ কারখানায় ফলোআপ পরিদর্শন করেছেন অ্যাকর্ডের প্রকৌশলীরা। এর মধ্যে কারখানা ভবনের স্থাপত্য-সংক্রান্ত সংশোধন কার্যক্রমের দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে ৩৯৩টিতে। আর বাকি ৫৩৯ কারখানা পরিদর্শন করা হয়েছে অগ্নি-বৈদ্যুতিক ও স্থাপত্য ত্রুটি সংশোধন কার্যক্রমের অগ্রগতি জানতে।

অ্যাকর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ফলোআপ পরিদর্শনে সংশোধন কার্যক্রম নিয়ে প্রকৌশলীরা সন্তুষ্ট হতে না পারলে প্রধান প্রকৌশলীর তরফ থেকে নন-কমপ্লায়েন্স চিঠি পাঠানো হচ্ছে। কারখানা কর্তৃপক্ষসহ এ চিঠি পাচ্ছে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা ও শ্রম সংগঠন। চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত মোট ৩৮টি কারখানা নন-কমপ্লায়েন্স চিঠি পেয়েছে। এছাড়া আরো ২৮ কারখানাকে ক্যাপ কার্যক্রমে নন-কো-অপারেশন বা অসহযোগিতার অভিযোগ এনে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’ এ হিসাবে প্রাথমিক পরিদর্শন-পরবর্তী অগ্রগতি ও ক্যাপ বাস্তবায়নে অসহযোগিতা-সংক্রান্ত মোট ৬৬টি কারখানাকে চিঠি পাঠিয়েছে অ্যাকর্ড।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, চিঠি পাঠানোর পর কারখানার সংস্কার কার্যক্রমে কোনো অগ্রগতি দেখা না গেলে অ্যাকর্ড চুক্তির ধারা বাস্তবায়নে বাধ্য হবে। এ-সংক্রান্ত ধারা বাস্তবায়ন হলে কারখানার সঙ্গে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের সম্পর্কচ্ছেদ হবে। এছাড়া কারখানার নামও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাকর্ডের নির্বাহী পরিচালক রব ওয়েজ জানান, ‘যে কারখানাগুলো নন-কমপ্লায়েন্স ও নন-কো-অপারেশনের চিঠি পেয়েছে, সেসব কারখানার মালিকরা প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স প্রাথমিক মূল্যায়ন শেষে পোশাক কারখানায় সংশোধনমূলক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বলেছে। তবে এ কার্যক্রমের অগ্রগতি যথেষ্ট নয়। বিষয়টি অ্যাকর্ডের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানও জানে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারখানার ত্রুটি সংশোধন ও সংস্কার না হলে মালিকদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কচ্ছেদই হবে শেষ পরিণাম। এর পূর্বাভাস হলো, সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়— এ অজুহাতে এরই মধ্যে অনেক কারখানার ভবিষ্যৎ ক্রয়াদেশ স্থগিত করেছেন ক্রেতারা।

অ্যাকর্ড প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর মে পর্যন্ত কারখানার অগ্নি-বৈদ্যুতিক ও স্থাপত্য-সংক্রান্ত মোট ৬৭ হাজার ৪৫৮টি নিরাপত্তা ইস্যু শনাক্ত করেছেন প্রকৌশলীরা, যার মধ্যে সংশোধন হয়েছে ৩ হাজার ২১৪টি। অ্যাকর্ড প্রকৌশলীরা সংস্কার যাচাই-বাছাই করেননি, শনাক্ত হওয়া এমন ইস্যু ১৭ হাজার ৯২৩টি। আর সংস্কার কার্যক্রম অগ্রগতি অব্যাহত আছে, এমন ইস্যুর সংখ্যা ৪৬ হাজার ৩২৩।

জানা গেছে, ৩১ মে পর্যন্ত বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ইস্যু শনাক্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৯৬৮টি। এর মধ্যে অগ্রগতি কার্যক্রম চলমান ১৫ হাজার ৮৪২টির। সংস্কার যাচাই-বাছাই বাকি আছে ৮ হাজার ১০৩টির। আর নিরাপত্তা ত্রুটি দূর হয়েছে, এমন ইস্যুর সংখ্যা ২ হাজার ২৩টি। অগ্নিনিরাপত্তা ইস্যু ২৫ হাজার ১১৮টি। এর মধ্যে অগ্রগতি চলমান, এমন ইস্যু ১৭ হাজার ৯৯টি। সংস্কার যাচাই-বাছাই বাকি আছে, এমন ইস্যু ৭ হাজার ৩৩৯ এবং নিরাপত্তা ত্রুটি দূর হয়েছে, এমন ইস্যুর সংখ্যা ৬৮০। স্থাপত্য-সংক্রান্ত ইস্যু শনাক্ত হয়েছে মোট ১৬ হাজার ৩৭২টি, যার মধ্যে অগ্রগতি চলমান ১৩ হাজার ৩৮০টির। যাচাই-বাছাই বাকি আছে ২ হাজার ৪৮১টি এবং নিরাপত্তা ত্রুটি দূর হয়েছে, এমন ইস্যুর সংখ্যা ৫১১।

এদিকে কারখানার সংস্কার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে ক্রেতারা পোশাক শিল্প মালিকদের অর্থায়ন সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সহযোগিতায় অ্যাকর্ডের ঋণ সুবিধার পাশাপাশি পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২৫০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স। তবে এ ঋণ সুবিধা পেতে সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি প্রমাণ করতে হবে কারখানা মালিকদের। আর প্রমাণ দেয়ার ক্ষেত্রে ৬৬টি কারখানাসহ প্রায় ৬০০ কারখানার সংস্কার কার্যক্রমকে গতিশীল করা প্রয়োজন, যা না হলে ব্যবসায়িক সম্পর্কচ্ছেদের মতো পরিণতি দেখতে হতে পারে মালিকদের।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, নানা কারণে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ক্রেতা জোটগুলোর মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে কারখানা মালিকদের জন্য বাস্তবতা হলো, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দ্রুত কারখানার ত্রুটি সংশোধন। আর সংস্কার কার্যক্রমের জন্য অর্থসহায়তার ঘোষণা দেয়া হলেও তা পুরো খাতের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।-ব. বার্তা।



মন্তব্য চালু নেই