সম্প্রতি গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, কাতারে প্রতি দুই দিনে একজন অভিবাসী শ্রমিক মারা যাচ্ছে। উত্তপ্ত বালুর ওপর প্রচণ্ড কায়িক শ্রম এবং পানির অভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমিকই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। এব্যাপারে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেও জানা যায়। তবে গত মাসের শুরুর দিকে দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয় শ্রম আইন সংশোধনের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত সেবিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি। কারণ আইন সংশোধন বা পরিবর্তনের সর্বোচ্চ অধিকার যতটা মন্ত্রণালয়ের, তারচেয়েও বেশি আমীরের। আর যেহেতু বিশ্বকাপ উদযাপন কমিটির প্রধানরা সবাই আমীরের আস্থাভাজন তাই মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অভিবাসী সংক্রান্ত আইন পাশ করা সহজ হচ্ছে না।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ইতোমধ্যেই অভিবাসী শ্রমিকদের নির্যাতনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরেছে। কিন্তু বারবার আশ্বাস দেয়া স্বত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যত দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১৫৭জন অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছে কাতারে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে। অন্যদিকে নির্মানে কাজে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩৪ জন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে কাতারে শুধু নেপালি শ্রমিকই মারা গেছে ১৮৮ জন। এছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতেরও অনেক শ্রমিক মারা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সংগঠক নিকোলাস ম্যাকঘান জানান, ‘উচ্চ তাপমাত্রায় যারা কাজ করে তাদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে সবেচেয়ে বেশি। যে হারে কাতারে অভিবাসী শ্রমিক মারা যাচ্ছে তা আমাদের সকলের জন্য উদ্বেগজনক। বসবাস এবং অব্যবস্থাপনাগত কারণে কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার দায়িত্ব কাতারের কাধেই বর্তায়। দেশটিকে আমরা বেশ কয়েকবার এনিয়ে জানিয়েছি এবং বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছি কিন্তু কাতার কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।’
কাতারের বিতর্কিত শ্রম আইন ‘কাফালা’ অনুযায়ী একজন অভিবাসী শ্রমিককে বাধ্যতামূলক একটি প্রতিষ্ঠানে পাঁচ বছর কাজ করতে হয়। আর আইনের এই ফাঁক গলে মালিক শ্রেনি অভিবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র জমা নিয়ে নেয়। যে কারণে ইচ্ছে এবং সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও অনেক অভিবাসী শ্রমিক অন্যত্র কাজ করতে যেতে পারে না। এমনকি কোনো শ্রমিক দেশে ফিরে যেতে চাইলেও তার থাকে না দেশে ফেরার সুযোগ।
এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটিতে প্রায় চার লাখ নেপালি অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছে। এবং অন্যান্য দেশের শ্রমিক মিলিয়ে মোট দেড় মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিক নির্মান শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছে।
মন্তব্য চালু নেই