কাগজে-কলমেই ‘সচল’ সিটিসেল

সিটিসেল চালু হলেও কার্যত তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। বাস্তবে সিটিসেল থেকে কোথাও ফোন করা যায় না, ফোন আসেও না। সংযোগ বা সেট সচল থাকলেও তা ওই পর্যন্তই। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির কোনও কাস্টমার কেয়ার বা গ্রাহক সেবা কেন্দ্র এখনও সচল হয়নি। ১৭ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৬ নভেম্বর বিটিআরসি সিটিসেলের সুইচ রুম খুলে দেয়। ওইদিনই ঘণ্টা তিনেক পরে চালু হয় মোবাইলফোন সংযোগ।সিটিসেলের কর্মীরা (প্রায় ৪৫০ জন) তাদের সংযোগ চালু করতে পারেন এবং নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতেও সক্ষম হন। কিন্তু দুইদিন পর সেই সংযোগ আর চালু থাকেনি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ও সিটিসেলের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সভাপতি আশরাফুল করিম।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা আমরা (সিটিসেলের কর্মীরা) ছাড়া সিটিসেলের আর কোনও গ্রাহক অবশিষ্ট নেই। চালু হওয়ার পরে তাই-ই ছিল। দু’দিন চালু থাকার পরে তা বন্ধ হয়ে গেছে।’

আশরাফুল করিম আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সিটিসেলের যে কয়টি বিটিএস (নেটওয়ার্ক টাওয়ার) সচল ছিল সেগুলোও ডাউন (বন্ধ) হয়ে গেছে।’ বিটিএসগুলো অনেক পুরনো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৬-২০০৭ সালের পরে সিটিসেল কর্তৃপক্ষ এই খাতে কোনও অর্থ বিনিয়োগ করেনি। হুয়াওয়ে এসব দেখভাল করত। ২০০৮ সালের পর তারাও নিজেদের গুটিয়ে নেয়।’ আশরাফুল করিমের ধারণা বিটিএসগুলোর ‘লাইফ সাইকেল’ এরইমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে সেগুলো ডাউন হয়ে গেছে। ফলে সিটিসেলের সক্রিয়ভাবে ‘সচল’ হওয়ার আর কোনও আশা দেখছেন না তিনি।

জানা গেছে, সিটিসেলের কর্মীদের পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে এরই মধ্যে। এছাড়া, রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বকেয়া ভাতা। এসব নিয়ে আজ (সোমবার) সিটিসেলের মালিক পক্ষের সঙ্গে বসার কথা রয়েছে কর্মীদের। এ বিষয়ে আশরাফুল করিম আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,‘শেষ পর্যন্ত হয়তো আমরা সফল হব না। এর আগেও এরকম হয়েছে অনেকবার। বসার কথা থাকলেও তারা আমাদের সঙ্গে বসেননি। মালিক পক্ষের একটি অংশ আমাদের সব দেনা-পাওনা দিয়ে দিতে চান। কিন্তু অপর একটি পক্ষ তা চান না। সমস্যা এখানেই।’ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিতে সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিতে তারা চিঠি পাঠিয়েছেন উল্লেখ করে আশরাফুল করিম বলেন, ‘এখনও আমরা কোনও জবাব পাইনি।’ তিনি এ-ও উল্লেখ করেন, ‘আমাদের প্রতিমন্ত্রী (তারানা হালিম) তো বলেই দিয়েছেন বেতন-ভাতা পরিশোধের দায়িত্ব সিটিসেলের। তাদের এ বিষয়ে কিছুই করার নেই।’ আশরাফুল করিম এখনও মনে করেন, ‘বিটিআরসি কর্মীদের পক্ষে এলে আমাদের বকেয়া এবং অন্যান্য পাওয়া আদায় সহজ হতো।’

প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই বিটিআরসি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিটিসেলের গ্রাহকদের দুই সপ্তাহের মধ্যে বিকল্প সেবা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানায়। সে হিসেবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত সময় পান গ্রাহকরা। যদিও ১৪ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানান, ‘বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিটিসেলের গ্রাহকরা আরও সময় পাবেন।’

এরপরে সিটিসেল উচ্চ আদালতে গেলে বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তে ওপর চলে যায়। বিটিআরসি ওই নোটিশ দিলে সিটিসেল আপিল বিভাগে যায়। আপিল বিভাগ গত ২৯ আগস্ট সিটিসেলের বকেয়া টাকা পরিশোধ করার শর্তে অপারেশন চালিয়ে যেতে বলে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি দুই মাস সময় পেয়েছিল। সিটিসেলের বকেয়া ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা দুই কিস্তিতে পরিশোধের কথা বলা হয়।

সিটিসেল তরঙ্গ খুলে দেওয়ার আবেদন নিয়ে আপিল বিভাগে গেলে ৩ নভেম্বর শর্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে সিটিসেলের তরঙ্গ খুলে দেওয়ার নির্দেশ আসে সর্বোচ্চ আদালত থেকে। দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তরঙ্গ ফিরে না পেয়ে, ফের আদালতে যায় সিটিসেল। এর মধ্যে সিটিসেল বকেয়া টাকার মধ্যে ১৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে। আপিল বিভাগের আদেশে বলা হয়, আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে সিটিসেল বকেয়ার ১০০ কোটি টাকা পরিশোধ না করলে আবারও তরঙ্গ বন্ধ করে দিতে পারবে বিটিআরসি।

এর আগে বকেয়া টাকা শোধ না করায় ২০ অক্টোবর সিটিসেলের তরঙ্গ স্থগিত করা হয়। বিটিআরসির কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় সিটিসেলের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকে তরঙ্গ বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেন।

বিটিআরসি প্রকাশিত (গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত) তথ্য অনুসারে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ৬ লাখ ৬৮ হাজার। সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, সিটিসেলের সক্রিয় গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ (বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত)।৩১ আগস্ট বিটিআরসি প্রকাশিত এক তথ্যে সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ১ লাখ ৪২ হাজার উল্লেখ করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই