কল্যাণপুরে জঙ্গিদের পিঠে গুলির ব্যাখ্যা কী?

কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত ৯ ‘জঙ্গি’র বেশিরভাগের শরীরে গুলি লেগেছে পেছন থেকে। বুধবার ময়নাতদন্ত শেষে এ তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকেরা। তবে পুলিশ বলছে অন্য কথা।

পুলিশের কথায়, এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার তেমন কোনো সুযোগ নেই। চারদিক থেকে অভিযান হয়েছে। শুধু পিছনে নয় বুক, মাথা বা শরীরের অন্য জায়গাও গুলি লেগেছে।

মঙ্গলবার ভোরে কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিং-এ পুলিশের অভিযানে ন’জন জঙ্গি নিহত হওয়ার পর, বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তাদের লাশ নেয়া হয়। পরদিন বুধবার, বেলা দু’টোর মধ্যে শেষ হয় ময়নাতদন্ত।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বুধবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, নিহত ন’জনের প্রত্যেকের শরীরে সাত থেকে আটটি গুলির ক্ষত আছে। নিহতদের মাথায়, বুকে, পিঠে, হাতে ও পায়ে গুলি লেগেছে। আর অধিকাংশের গুলিই লেগেছে পেছন থেকে।

এই ন’জনের দেহ থেকে মোট সাতটি গুলি উদ্ধার করেছে ময়নাতদন্তকারী দল। এর তিনটিই ছিল একজনের দেহে। এর বাইরে একজনের দেহে দু’টি এবং অন্য দুই জঙ্গির দেহ থেকে একটি করে মোট দু’টি গুলি উদ্ধার করা হয়। তবে ন’টি মৃতদেহের মধ্যে ক’টার পেছন দিকে গুলি লেগেছিল, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেননি চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসকরা জানান, তাঁরা মৃতদেহের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্তের নমুনা রেখেছেন। চুল, পায়ের পেশির কিছুটা অংশ, পাকস্থলী, কিডনি ও যকৃতের অংশবিশেষও সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া ডোপ টেস্টের জন্য মূত্রের নমুনা পরীক্ষা করা হবে। এই ন’জন কোনো বিশেষ ড্রাগে আসক্ত ছিল কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে বলেও জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. সোহেল মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী এবং মানবাধিকার নেত…নূর খান বলেন, আমার মতে যারা নিহত হয়েছে, তারা যে জঙ্গি এটা নিয়ে সন্দেহের তেমন কোনো অবকাশ নাই।

তবে অভিযান নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন আছে। বিশেষ করে যদি অভিযানের সময় গোলাগুলি হয়, তাহলে নিহত অধিকাংশের পিছনে গুলি বিদ্ধ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করাই যায়। তবে এখনো অমরা অনেক কিছু জানি না। আশা করি পুলিশ বিষয়গুলো স্পষ্ট করবে।

ওদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তকারী দলের প্রধান চিকিৎসক সংক্ষিপ্ত মন্তব্য করেছেন। তিনি শুধু পিঠে গুলি লাগার কথা বলেননি, বুকে এবং মাথাসহ শরীরের অন্যান্য জায়গাও গুলি লাগার কথা বলেছেন। সুতরাং পিঠে গুলি লাগার ঘটনা নিয়ে কোনো আনুমানিক ধারণা বা প্রশ্ন তোলার তেমন কোনো সুযোগ নেই।

তিনি জানান, জঙ্গিরা চারটি কক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাদের বিভিন্ন দিক থেকে গুলি করা হয়। সোয়াট টিম সব দিক থেকে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। তাই গুলি তাদের শরীরে যে কোনো দিক থেকেই লাগতে পারে।

মনিরুল ইসলাম আরো বলেন, ময়নাতদন্তের এখনো পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন আমরা পাইনি। পেলে আরো বিস্তারিত মন্তব্য করা যাবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকার কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কের জাহাজ বিল্ডিংয়ে মঙ্গলবার ভোররাতে এক ঘণ্টার অভিযান স্টর্ম ২৬-এর সময় নয়’জন নিহত ও একজন আহত হয়। অভিযান প্রস্তুতি অবশ্য রাতভর চলে। পুলিশের আইজি এ কে এম শহীদুল হক অভিযানের পর জানান যে, নিহতরা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি-র সদস্য। তারা বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল এবং গুলশান হামলাকারী গ্রুপেরই সদস্য ছিল বলেও জানান তিনি। সূত্র: ডয়চে ভেলে



মন্তব্য চালু নেই