কলারোয়ায় প্রশ্নপত্র জালিয়াতী শিক্ষক সাজ্জাতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তদন্তে নেমেছে শিক্ষা অফিস
সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার উপজেলা সদরে অবস্থিত কলারোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাজ্জাত হোসেন এর বিরুদ্ধে সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতিসহ সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত প্রধান শিক্ষক কলারোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে তার অন্যতম ব্যবসা ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের একপ্রকার জিম্মি করে প্রহসনমূলক প্রাইভেট ব্যবস্থাকে সূদৃঢ় করার জন্য প্রতিবছর বার্ষিকসহ প্রত্যেক সাময়িক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন বলে জানা গেছে।
আরো জানা যায় তিনি অর্থের বিনিময়ে প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট পরীক্ষার পূর্ব দিন অথবা নির্ধারিত দিন সকালে ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে শিক্ষা প্রশাসনকে জানানো হলেও সুনিশ্চিত প্রমানের অভাবে উক্ত কৌশলী ও সুচতুর শিক্ষক পর্দার আড়ালেই থেকে যান। তার বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে গত ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে দৈনিক কাফেলা এবং ৪ অক্টোবর তারিখে দৈনিক দৃষ্টিপাত পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সাতক্ষীরার তদন্তে অভিযোগ সমূহ সত্য প্রমানিত হলেও অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায় (জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর প্রদানকৃত তদন্ত রিপোর্ট যার স্মারক নং- জেপ্রাশি/সাত/তদন্ত প্রতিবেদন/২৭২৬, তারিখঃ ২৯/১১/২০১২ খ্রিঃ )। বার বার প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনকারী এ প্রধান শিক্ষক গত ২২ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে ২৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখের ১ম সাময়িক পরীক্ষার ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির ইংরেজি এবং ৫ম শ্রেণির ইংরেজি ও গণিত (২৫ এপ্রিল ২০১৫ তারিখ) বিষয়ের প্রশ্নপত্র তার প্রাইভেটে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদেরকে সরবরাহ করে অনুশীলন করাচ্ছিলেন।
এ সময় একই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ও অভিভাবক নাছরিন সুলতানা বেবী কয়েকজন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির ইংরেজি এবং ৫ম শ্রেণির ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের জালিয়াতিকৃত প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন। উক্ত শিক্ষক নাছরিন সুলতানা বেবী কলাটুপী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরিফুজ্জামান কাকন ও হঠাৎগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ সিরাজুল ইসলামকে সাথে নিয়ে উদ্ধারকৃত প্রশ্নপত্র উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেনের কাছে নিয়ে আসেন। বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এ প্রধান শিক্ষক বরাবরই রহস্যময় কারণে পরীক্ষা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন এবং আর্থিক স্বার্থ হাসিল করেন। পুস্তক প্রকাশনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ গাইড বই (অনুপম) ছাত্রছাত্রীদেরকে কিনতে বাধ্য করেছেন এ মর্মেও অভিযোগ রয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা সদরের ডাকবাংলা রোড/ গার্লস হাইস্কুল রোড এ অবস্থিত কর্ডোভা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের একাধিক কক্ষ ভাড়া নিয়ে সকালের ২ ব্যাচে শিক্ষার্থী প্রতি ১০০০/- (এক হাজার) টাকা এবং বিকালের ২ ব্যাচে শিক্ষার্থী প্রতি ৫০০/- (পাঁচশত) টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের তার কাছে পড়তে বাধ্য করেন। এ ধরনের বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বার বার অভিযুক্ত এবং তার সত্যতা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও তিনি কিভাবে বহাল তবিয়তে স্বপদে বহাল রয়েছেন তা শিক্ষক-অভিভাবক মহলের কাছে রহস্যেঘেরা। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নিজের রক্ষার জন্য বিভিন্ন মহলে দেন দরবার করছেন বলেও জানা গেছে।
গত ২৩ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সাতক্ষীরা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকায় এ প্রশ্নফাঁস সম্পর্কিত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সংবাদটি কলারোয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আকবর হোসেনের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় তিনি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার জনাব শেখ আবুল কালামকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করার জন্য লিখিত নির্দেশ প্রদান করেছেন মর্মে প্রেস রিলিজ প্রেরণ করেছেন। যার স্মারক নং উশিঅ/ কলা/ সাত/ কারণদর্শানো/ ১০১৩/ ২। প্রশ্নফাঁসের এ বিষয়টি বর্তমানে উপজেলার প্রধান আলোচিত বিষয়।
এছাড়াও তিনি তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবকদের সাথে দূর্ব্যবহার করেন এবং তিনি বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম নৈশপ্রহরীকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে জানা গেছে, কলারোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাত হোসেন প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটির সদস্য। সেই সুবাদে প্রশ্ন কপি করে রেখে দিয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের সেই প্রশ্নে উত্তর লেখা অনুশীলন করানোর সময় বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।
ঘটনা জানতে পেরে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক নাসরিন সুলতানা বেবী ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির কয়েকটি প্রশ্নপত্র ও খাতা উদ্ধার করে বুধবার সন্ধায় তা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের কাছে হস্তান্তর করেন। এদিকে, উপজেলার কলাটুপী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরিফুজ্জামান কাকন ও হঠাৎগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, নাসরিন সুলতানা বেবীর উদ্ধার করা কলারোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাত হোসেনের নিজের হাতে লেখা দুটি প্রশ্ন গত বৃহস্পতিবার সকালে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দেন।
সাংবাদিকদের হাতে দেয়া প্রশ্নের সাথে স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের দেয়া প্রশ্নে অনেকগুলো হুবহু মিল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রশ্নের ক্রমিক নম্বর আগে পরে দিয়ে, কোথাও বদলে রোমান সংখ্যায় ক্রমিক দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে উপর নীচে করে গরমিল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া নাম, স্থান, কাল, পাত্রের নাম পরিবর্তন করে সুকৌশলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
এ’ব্যাপারে কলারোয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।
কলারোয়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন ফাঁস হওয়া ইংরেজী প্রশ্নের সাথে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নের অনেক মিল রয়েছে এবং ইতোপূর্বে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাজ্জাত হোসেন এ’ধরণের অপরাধ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন। এদিকে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাজ্জাত হোসেন বিভিন্ন মহলে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, পৌরসদরের স্থায়ীভাবে বসবাসকারী যোগ্য প্রধান শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও উপজেলা সদর বা পৌরসদর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরবর্তি ধানদিয়ার পাশ্ববর্তি গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক মোঃ সাজ্জাত হোসেন সীমাহীন দূর্নীতি প্রমানীত হওয়ার পর কিভাবে সুদীর্ঘকাল ধরে উপজেলা/ পৌরসদরের প্রানকেন্দ্রের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসাবে বহাল থাকেন তা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।
মন্তব্য চালু নেই