কলারোয়ায় কচু ও মুখি কচু চাষে সাফল্য
জুলফিকার আলী, কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ কলারোয়ায় উপজেলায় গত কয়েক বছর ধরে মুখি কচু চাষির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মুখি কচু চাষে মুনাফা বেশি হওয়ায় মানুষ মুখি কচু চাষ করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।
কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মুখি কচু চাষ করে বিপুল সংখ্যক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছেন। এলাকায় অনেক জমিতে ফসল চাষ না করে জমির মালিকরা জমি ফেলে রাখতো। সেখানে আজ মুখি কচুর চাষ হচ্ছে।
সম্প্রতি কলারোয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, শত শত ছোট বড় জমিতে মুখি কচুর চাষ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, যে ব্যক্তি গত বছর তিন একর জমিতে কচুর চাষ করেছিলেন। ভালো মুনাফা পাওয়ায় এবার তিনি ৫ একর জমিতে মুখি কচুর চাষ করেন। স্থানীয় মুখি কচু চাষিরা বলেন এখন শত শত একর জমি জুড়ে কচু চাষ করছে এখানকার মানুষ। মুখি কচু চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম কিন্তু মুনাফা বেশি।
তাছাড়া গরু ছাগলেও কচু নষ্ট করেনা। তাই আস্তে আস্তে সাধারণ মানুষ মুখি কচু চাষের দিকে ঝুঁকছেন। স্থানীয় একাধিক মুখি কচু চাষি বলেন, ১ মণ কচু চাষ করলে ফলন পাওয়া যায় প্রায় ৫০ মণ। স্থানীয় জনৈক চাষি বলেন, তিনি অনেক প্রকার কচুর চাষ করছেন। কচুক্ষেত থেকে কচুর ফুল, কচুর ছড়া, কচু শাক ইত্যাদি পাওয়া যায়। বাজারে সব কচুরই চাহিদা আছে। উৎপাদিত কচু ফুল, ছড়া ও শাক বিক্রি করার জন্য চাষিদের তেমন কষ্ট করতে হয়না। বাগান থেকে রাস্তার পাশে এনে রাখলেই ক্রেতারা কচু কিনে নেন।
তিনি জানান কচু চাষ সম্পর্কে চাষিরা কলারোয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করেন। যে কোন সমস্যায় কৃষি বিভাগকে সংবাদ দিলে সাথে সাথে কর্মকর্তারা কৃষকের বাগানে ছুটে আসেন। কচু চাষ করার পেছনে উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণও বেশ ভূমিকা রেখেছে বলেও অনেকে জানান।
চাষিরা বলেন নির্দিষ্ট দিনে কৃষকরা বাগান থেকে কচুর ফুল, ছড়া, শাক ইত্যাদি বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। কলারোয়া বাজারে প্রতি শুক্রবার চাষিরা ফসল তোলেন। বাজারেও ফসল বিক্রি হয় আবার ব্যাপারীরা কিনে নিয়ে যায়। বাজারে প্রতি কেজি কচু ও কচুর ফুল ৩৫ থেকে ৪০ ও মুখি কচু ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।
এদিকে এই লাভজন ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন কলারোয়া পৌর সদরের ঝিকরা গ্রামের কাচা তরকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। নিজ উদ্যেগে ২৮হাজার টাকা খরচ করে ১৬শতক জমিতে এবার মুখি কচুর চাষ করেছেন। তিনি আরো বলেন ভাল ফলন হলে ৭০/৮০হাজার টাকা বিক্রয় করতে পারবেন এই মুখি কচু। কিন্তু তিনি কারর পরামশ্য না নিয়ে এই প্রথম মুখি কচুর চাষে নেমেছেন।
এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায় আরো কয়েক রকম কচু চাষ হয়। এগুলো হলো পানি কচু ও মুখি কচু। পানি কচু অগ্রাহায়ন, পৌষ ও মাঘ মাসে ক্ষেতে লাগানো হয়। মুখি কচু চৈত্র-বৈশাখ মাসে লাগানো হয়। আনুমানিক ৬/৭ মাস পরেই ফলন তোলার সময় হয়।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহাসীন আলী জানান, কচু চাষে খুব বেশি পরিশ্রম না থাকলেও চাষের যতœ নিতে হয়। কচুর সারিকে মাটি দিয়ে উঁচু করে দিতে হয়। যাতে কচুর গোড়ায় পানি না জমে। গোড়ায় পানি জমলে কচু নষ্ট হয়। কচু ক্ষেতে পাতা ঝলসানো রোগ, গোড়া পচন রোগ ইত্যাদি বালাই হতে পারে। কচুর পাতা ঝলসানো রোগে পটাশ সার ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, কচু ক্ষেতে তেমন আগাছা হয়না। যে কারণে শ্রম কম লাগে। প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০ মেট্টিক টন কচু পাওয়া যায়। কচুর ফুল পাওয়া যায় ১ হাজার কেজি।
এছাড়া কচু শাক (কচুর কচি পাতা যা সবার কাছে কচু শাক হিসেবে পরিচিত) সেটাও পাওয়া যায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম এবং মুনাফা বেশি তাই অনেক কৃষক কচু চাষের দিকে আগ্রহী হচ্ছেন। আদা হলুদের চেয়ে কচু চাষ লাভজনক বলেও অনেক চাষি সাংবাদিকদের জানান।
মন্তব্য চালু নেই