কর্মীকে হত্যা করে ‘ছিনতাই নাটক’ রেস্তোরাঁ মালিকের
‘রাজধানীতে ছিনতাইকারীর গুলিতে হোটেল কর্মচারী নিহত’ এমন শিরোনামে সকালে সংবাদ প্রকাশের এক ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই বেড়িয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। হোটেলের কর্মচারী রিয়াদ (১৮) আদতে কোনো ছিনতাইয়ের শিকারই হননি। চুরির অভিযোগে হোটেল মালিক সোহেলের নেতৃত্বে তার সহকর্মীরা হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুন করেছেন রিয়াদকে। শেষে ‘ফিল্মি স্টাইলে’ গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন সোহেল।
মঙ্গলবার আনুমানিক রাত দেড়টার দিকে ৭৩ স্বামীবাগ মিতালী স্কুল রোড, নির্মাণাধীন ভবনের ২ তলায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত রিয়াদ চাঁদপুর হাজিগঞ্জের হাতিআইনের মৃত মফিজুল ইসলামের ছেলে।
ওয়ারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেক জানান, গতকাল রাত্রিকালীন ডিউটি করার সময় তিনি জানতে পারেন মতিঝিলে ‘ঘরোয়া হোটেল’ নামের একটি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা মারামারি করছেন। পরে সেই সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে যান। ওইখানে কর্মচারীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন, রিয়াদ ১৫০০ টাকা ও একটি মোবাইল সেট চুরি করেছিল। এ নিয়ে অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছিল। ঘরোয়া হোটেলের মালিক সোহেল বিষয়টি জানতে পেরে রিয়াদকে হাত-পা বেঁধে মারধর করেন। শেষে সোহেল নিজের একটি পিস্তল বের করে মুখের কাছে এক রাউন্ড গুলি করে রিয়াদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
তিনি আরো জানান, মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনি অন্য দুই কর্মচারী জসিম ও রাজুসহ দিয়ে রিয়াদকে নিয়ে রাত ২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান। যাওয়ার আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ‘ছিনতাইয়ের ঘটনায় রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে’ এমন একটা নাটকও সাজিয়ে ফেলেন সোহেল। পরিকল্পনামতো ঢামেকে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সোহেল বলে পারও পেয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ওয়ারী থানা পুলিশের উদ্ধার করা সিসি টিভির ফুটেজ ও ‘আসল ঘটনার’ তথ্য সোহেলের নাটককে ভণ্ডুল করে দেয়।
তিনি জানান, সিসি টিভির ফুটেজে দেখা গেছে চারজন যুবক অচেতন অবস্থায় বা মৃতবস্থায় রিয়াদের হাত ধরে হোটেল থেকে বের করছেন।
ফকিরাপুলে কাজ করেন রিয়াদের বড় ভাই রিপন। তিনি জানান, রাতেই সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি। কিন্তু তখন তাকেও ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। সোহেলের লোকজন তাকে বের করে দেন। পরে জানতে পারেন আহত অবস্থায় তার ভাইকে ঢামেকে ভর্তি করানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমার ভাই চোর না। সাড়ে তিন বছর ধরে ওই (ঘরোয়া) হোটেলে কাজ করে। তাকে এভাবে নির্মমভাবে মারা হল। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’বাংলামেইল
মন্তব্য চালু নেই