কর্মস্থলে ফিরতে শিমুলিয়ায় বিপুল জনজট : বাস ভাড়া বৃদ্ধি

নাসরিন আক্তার, মুন্সীগঞ্জ থেকে : ঈদুল ফিতরের ৪দিন অতিবাহিত হলেও বেড়েই চলেছে দক্ষিণবঙ্গের ঘরমুখো মানুষের কর্মস্থলে ফেরার পালা। রোববারও সকাল থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৪ জেলার অন্যতম করিডোর শিমুলিয়া ও কাওড়াকান্দি ঘাট হয়ে পদ্মা পাড়ি দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন ঢাকামুখী শ’ শ’ যাত্রী। এ সময় উভয় ঘাটে বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপের কারণে বাড়তি জনজট দেখা দিলে পরিবহন সঙ্কটে চরম দুর্ভোগে পড়েন কর্মস্থলে ফেরা এসব যাত্রী।

অন্যদিকে, ঈদের ছুটি শেষে আগের দিন শনিবার ও রোববার সকালের দিকে কাওড়াকান্দি ঘাটে ফেরি পারপারের যানবাহনের দীর্ঘ লাইন দেখা দিলে ঘন্টার পর ঘন্টা ফেরির অপেক্ষায় চরম দুর্ভোগ পড়েন শ’ শ’ যানবাহনের যাত্রীরা। এ সময় যানবাহনের চাপ সামাল দিতে শিমুলিয়া ঘাট থেকে কিছু সময় পর পর কাওড়াকান্দি ঘাটে অল্প যানবাহন নিয়ে অনেকটা খালি ফেরি পাঠায় ফেরি কর্তৃপক্ষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কর্মস্থলে ফেরা এসব যাত্রী ও ফেরি পারপারের যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকলেও একপর্যায়ে শিমুলিয়া থেকে খালি লঞ্চ, ফেরি ও সিবোট কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে গিয়ে চাপ ঠেকাতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

এ সময় দুপুর ১টার পর কাওড়াকান্দি ঘাটে পর্যাপ্ত ফেরির কারণে যানবাহনের চাপ বোঝা যাচ্ছিল না বলে নিশ্চিত করেছেন কাওড়াকান্দি ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আব্দুস সালাম। তবে শনিবার বিকেলে ও রোববার সকালের দিকে কাওড়াকান্দি ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন ।

এদিকে, ঘাটে যাত্রীদের তুলনায় নৌযান সঙ্কটে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের লঞ্চগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড়। এ সময় নৌযান সঙ্কটে কাওড়াকান্দি ঘাটে বিপুল সংখ্যক যাত্রী পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকেও কিছু কিছু যাত্রী লঞ্চের অপেক্ষায় ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় এ ঘাটে ঈদের বিশেষ দায়িত্বে কর্তব্যরত বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে ছেড়ে আসা শিমুলিয়াগামী লঞ্চে যাত্রী ধারণক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেলেই এ ঘাটে সেসব লঞ্চগুলো ভীড়তে দেয়া হচ্ছে না। একটু কম যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোই এ ঘাটে ভীড়ছে। এজন্য আমরা এ দু’ঘাটেই সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে পদ্মায় যাত্রী পারাপার করছি ।

এদিকে, দীর্ঘ সময় নিয়ে কোনরকমে পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসলেও কর্মস্থলগামী এসব যাত্রীর চাপে শিমুলিয়া বাস টার্মিনালে জনজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রায় প্রতিটি পরিবহন কাউন্টারে গাড়ির অপেক্ষায় শিশু-মহিলা-বৃদ্ধসহ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। আবার পরিবহনগুলোর সিরিয়ালের গাড়িতে উঠতে বেশ কিছু সময় নির্দিষ্ট গাড়ির অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে বাস যাত্রীদের। নিরুপায় এসব যাত্রীরা শিমুলিয়ায় এসে আবার গাদাগাদি-ঠাসাঠাসি করে বাসের ভেতরে ও দাঁিড়য়ে ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে ফিরছেন।
অন্যদিকে, পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দাবি, টার্মিনালে পর্যাপ্ত বাস রয়েছে যা অধিকমাত্রার ভীড় সামাল দিতে সক্ষম।

এদিকে, ঈদের পরে রোববার যাত্রীচাপের সুযোগে কিছু সংখ্যক লোকাল বাসে ও কাউন্টারভিত্তিক বাসগুলোতে নির্ধারিত ভাড়া ৭০টাকার স্থলে ১০০টাকা ও ১০০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা ভাড়া আদায় করে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন।

পদ্মা পাড়ি দিয়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রী বাগেরহাট সদর উপজেলার বরইপুর গ্রামের সুমন মিয়া ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাছিকাটা গ্রামের আব্দুল্লাহ জানান, শিমুলিয়া থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত বাসভাড়া ৭০ টাকার স্থলে ১০০ টাকা ও শিমুলিয়া থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ১০০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে।

অভারলোডিং ও লঞ্চ সঙ্কট প্রসঙ্গে কাওড়াকান্দি ঘাটে বিআইডব্লিউটিএর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আল মাহমুদ জানান, অভারলোডিং ঠেকাতে আমরা সর্বাত্বক চেষ্টা চালাচ্ছি। তাছাড়া বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, নৌপুলিশসহ অন্যান্য মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক তদারকির মাধ্যমে লঞ্চে ধারণক্ষমতা অনুযায়ী গুনে গুনে যাত্রী দেয়া হচ্ছে। একইসাথে ঢাকামুখো যাত্রীদের চাপ থাকায় কাওড়াকান্দি থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী নামিয়ে ফিরতি পথে খালি চলে আসছে বলে এখানে কোন নৌযান সঙ্কট থাকছে না।



মন্তব্য চালু নেই