কর্মসংস্থানের অভাবেই মানুষ দেশ ছাড়ছে
দেশে কর্মসংস্থানের অভাবেই বিপদের আশঙ্কা নিয়েও মানুষ দেশ ছাড়ছে। দেশে নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা থাকলে এমনটি হতো না।
শনিবার বিকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের আলোচনায় এসব কথা উঠে এসেছে।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনিন আহমেদ।
সম্প্রতি সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টায় বহু বাংলাদেশী নাগরিক মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে আটকের খবর প্রকাশ হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
এ প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠানে এক দর্শকের প্রশ্ন ছিল- মারাত্মক বিপদের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মানুষ কেন বেপরোয়া হয়ে দেশ ছাড়ছে?
উত্তরে নাজনিন আহমেদ বলেন, “দেশে উন্নয়নের তুলনায় আয়বৈষম্য কমেনি। উন্নয়নের ফল দরিদ্রশ্রেণীর কাছে পৌঁছতে পারছে না।”
এরপর এক নারী দর্শক বলেন, “অভাবের কারণে বিদেশ গিয়েও অনেকে চাহিদা অনুযায়ী আয় করতে পারছে না। এ জন্য দেশে কর্মসংস্থান করা যায় কি না সেটি সরকারের দেখা উচিত।”
আরেকজন দর্শক বলেন, “ঘরে ঘরে বেকারত্ব মোচন না করলে এমন সমস্যা দিন দিন বাড়বে।”
তবে নাজনিন আহমেদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ড. মশিউর রহমান বলেন, “স্বীকার করতে হবে- বৈষম্য কমেছে, আয় বেড়েছে। দরিদ্রদের সরকার ব্যাপক সহায়তা করছে। সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। আদমব্যাপারীরা এ ব্যবসা থেকে সরে গেলেও সে ব্যবসার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব বেড়ে গেছে।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষ প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায়ও ভুগছে। আর শুধু দরিদ্ররাই নয়, জীবন ও সম্পদ রক্ষায় অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।”
দর্শকদের একজন বলেন, “অর্থনৈতিক কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। রাষ্ট্র আমাদের কর্মসংস্থান তৈরি ব্যর্থ। রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিকরা ভিন্ন চিন্তা করে।” আরেকজন বলেন, “অভাব, দারিদ্র্য দূর হচ্ছে না। আমাদের মূল চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না।”
ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “অর্থনৈতিক কারণগুলো কিন্তু সব সময়ই ছিল। তাই দেশের ভেতর কর্মসংস্থান সৃষ্টি না করা হলে, এ বিদেশ গমন বন্ধ করা সম্ভব নয়। দেশে ভালো থাকার ব্যবস্থার জন্য কর্মসংস্থান জরুরি।”
এ ছাড়া অভিবাসন প্রত্যাশীদের সংকট সমাধানে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের ভূমিকা নিয়েও অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়। প্রশ্ন ছিল- অবৈধ পন্থায় সমুদ্রপথে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে যে সংকট এখনো চলছে, প্রতিবেশী মিয়ানমারের সব ধরনের সহযোগিতা ছাড়া তার কি একটি টেকসই সমাধান সম্ভব?
উত্তরে ড. দেলোয়ার হোসেন বলেন, “টেকসই সমাধানের জন্য সাহায্য অবশ্যই লাগবে। তবে প্রথমে তাদের যে অবস্থান ছিল, সেখান থেকে তাদের পরিবর্তন হয়েছে। মানব পাচারের বিষয়ে কিছু স্থায়ী সমাধান পাওয়া গেলেও রোহিঙ্গা ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান পেতে মিয়ানমারের সাহায্য সবচেয়ে বেশি দরকার। এ জন্য আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করতে হবে।”
ড. মশিউর রহমান বলেন, “কূটনৈতিক চেষ্টা আমরা করেছি। কিন্তু কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে অবৈধ প্রবেশে রোহিঙ্গাদের যেভাবে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছিল, সেখান থেকে অবস্থার পরিবর্তন করতেও কিছু সময় লাগবে।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “কোনো দেশের শুধু নয়, এটা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। বাংলাদেশের উদ্যোগে ঘাটতি ছিলো। আর বাংলাদেশেরও একটি কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকার প্রয়োজন ছিল। কারণ তাদের (রোহিঙ্গা) কিন্তু সব সময়ই বাংলাদেশের দিকে ফিরিয়ে দেয়।”
নাজনিন আহমেদ বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সহযোগিতা ছাড়া টেকসই সমাধান হবে না। রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেয়ার পাশাপাশি অন্য দেশগুলোরও সক্রিয় হয়ে কূটনৈতিক চাপ তৈরি ও সহমর্মিতামূলক অবস্থান নিতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই