কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে চলবে যানবাহন!
![](https://archive1.ournewsbd.net/wp-content/uploads/2015/10/45942c6556f0853850fa53f08a00600b.jpg)
বাংলাদেশে এবারই প্রথম চীনের সাংহাইয়ের আদলে চট্টগ্রামে তৈরি হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। এটি নির্মিত হলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চলবে যানবাহন। ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে হলে চট্টগ্রাম শহরের যানজটে আটকা পড়তে হবে না। একইভাবে কক্সবাজার থেকে ঢাকা আসতে হলে চট্টগ্রাম শহরের যানজট এড়িয়ে আসা যাবে।
কর্ণফুলী নদীর ওপর দিয়ে বর্তমানে চালু দু’টি ব্রিজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের চাপও কমানো যাবে টানেল নির্মাণের মাধ্যমে।
চীনের সাংহাইয়ের আদলে `One City two Town’ ব্যবস্থা গড়ে তোলার এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু সেতু নয়, সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়েও চলাচল করবে যানবাহন।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে এ টানেল নির্মাণ করবে সরকার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, টানেল তৈরির আগেই মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) ২ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা বেড়ে এখন প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। যেখানে মূল ডিপিপি’তে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল মাত্র ৫ হাজার ৬০০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, মূল ডিপিপি’তে থেকে সংশোধিত ডিপিপি’তে কিছু কাজ বাড়তি যোগ করায় টানেল নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার এবং ৫ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করা হবে।
মূল ডিপিপি থেকে সংশোধিত ডিপিপি’তে ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক আবুল হুসাইন বলেন, প্রকল্পের আওতায় টাগ বোট, সার্ভিস এরিয়া ও মনিটারিং সফটওয়্যারসহ কিছু অঙ্গ যোগ হচ্ছে। যে কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, চীনের সাংহাইয়ের আদলে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এতে করে চট্টগ্রাম শহরের দুই পাশেই সমানভাবে উন্নয়ন করা সম্ভব হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যেতে চট্টগ্রাম শহরকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যাবে টানেলের মাধ্যমে।
চীনের সাংহাইয়ের আদলে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার কেন্দ্রস্থল হিসেবে চট্রগ্রামের ভূমিকা শক্তিশালী করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। যাতে করে দেশের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে সক্ষম হয় দেশের বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম।
এ ধরনের উন্নয়ন কাজ এবারই বাংলাদেশে প্রথম হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে কয়েক দফা ‘কন্সট্রাকশন অব মাল্টি লেন রোড টানেল আন্ডার
দ্য রিভার কর্ণফুলী’ প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানির মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণের কারিগরি এবং অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়।
সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন (জিওবি) এক হাজার ৪৬০ কোটি টাকা এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ ৪ হাজার ১৪০ কোটি টাকা। তবে বৈঠকে সেতু বিভাগের প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় অতিরিক্ত বাড়ানো হয়েছে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহর কর্ণফুলী নদীর মাধ্যমে দুই ভাগে বিভক্ত। মূল শহর এবং বন্দর এলাকা কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত। অন্যদিকে ভারি শিল্প এলাকা পূর্ব পাশে অবস্থিত। বর্তমানে সচল দু’টি ব্রিজের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যান চলাচল সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়াও কর্ণফুলী নদীর তলায় পলি জমার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পলি জমার সমস্যা সমাধানের জন্যই কর্ণফুলী নদীতে অন্য কোনো ব্রিজ নির্মাণের পরিবর্তে নদীর নিচ দিয়ে এ টানেল (সুড়ঙ্গ) নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের জন্য ১৮ দশমিক ২০ হেক্টর জমি ও সিডি ভাট খাতে আরও এক হাজার কোটি টাকা প্রয়োজনের জন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
সেতু বিভাগ সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৭ হাজার ২০০ বর্গমিটার সার্ভিস সুবিধা, ২৮ দশমিক ৯৬ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন করা হবে। এছাড়া ৭টি জিপ, ২২টি মোটরসাইকেল, ৩৩টি ডেক্সটপ, ১৭টি ল্যাপটপ, ৫টি ফটোকপি মেশিন, দু’টি ফ্যাক্স মেশিন এবং একটি প্রজেক্টর কেনা হবে। পাশাপাশি পরিবেশ ব্যবস্থাপনার জন্য নানা ধরনের কাজ হাতে নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আশা, টানেলটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে কর্ণফুলী নদীর দুই পাশে নতুন নতুন শিল্প কারখানার বিপ্লব সৃষ্টি হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে বলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। মাতারবাড়িতে যে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে সেটির কারণেও টানেলের গুরুত্ব বাড়বে।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য ফিজিবিলিটি স্টাডি করার সময় বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে। টানেলের বিষয়ে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো বিবেচনা করে তার প্রতিরোধমূলক কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তার একটি প্রতিবেদন ডিপিপি’তে যোগ করা হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চায়না কমিউনিকেশন কন্সট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পের জন্য সরকারি অর্থায়নে একজন ব্রিটিশ পরামর্শককেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম হবে বাংলাদেশের সাংহাই বলেও আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।বাংলানিউজ
মন্তব্য চালু নেই