কম পানি পানে যেসব ক্ষতি হয়

খাবার না খেয়েও যে কোন মানুষ অনেকদিন বাঁচতে পারে। কিন্তু পানি পান না করলে একদিনও টিকে থাকা অসম্ভব। তবে শুধু পানি পান করলেই হবে না। শরীরকে সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পানি করা জরুরি। কারণ কম পানি পানে স্বাস্থের ক্ষতি একদিনেই টের পাওয়া যায়। আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ কাজই হয় পানির উপর ভিত্তি করে। কাজেই এর অভাবে শরীরের নানা অংশ মারাত্মক ক্ষতি হবে এটাই স্বাভাবিক।

জেনে নিন কম পানি পানের ১০ ক্ষতি সম্পর্কে-

পানিশূন্যতা
পানি পান না করার প্রথম লক্ষই হলো পানিশূন্যতা। এসব লোকেরা সবসময় তৃষ্ণা বোধ করেন এবং তাদের সবসময় মাথা ব্যথা হয়। তাদের মুখ, ঠোঁট, জিহ্বা এবং ত্বক অনেক শুষ্ক হয়ে যায়। এসব ব্যক্তির দেহে পানির অভাব যখন চরম পর্যায়ে পৌছায় তখন নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে গাঢ় রঙ্গের প্রসাব, মাথা ঘোরা এবং বুকে ব্যথা অনুভব হয়। এর ফলে শিশু এবং বয়স্করা বেশিরভাগ সময় জ্বরে ভোগেন। পরবর্তীতে এসব রোগীরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারেন।

তাপমাত্রা বাড়ে
ত্বক এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গকে ঠাণ্ডা রাখতে কাজ করে শরীরের ভেতরের পানি। কাজেই পর্যাপ্ত পানি পান না করলে এই কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে না। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে। শুধু তাই নয়, এর অভাবে ঝিমুনি লাগে, দুর্বলতা বাড়ে এবং সবসময় খুব গরম এবং খুব ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। এমনকি এর অভাবে হিট স্ট্রোকেও কেউ কেউ মারা যেতে পারে।

ভারসাম্যহীনতা
পর্যাপ্ত পানি পানের অভাবে শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহে বাধা পায়। এর ফলে শরীরের বর্জ্যগুলো বের হতে পারে না। এছাড়া হাড় এবং জয়েন্টগুলোরও অনেক ক্ষতি হয়। এর ফলে শরীরের ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানগুলোর মধ্যে ব্যাপক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। পরবর্তীতে কিডনি সমস্যা, জ্ঞান হারানো, রক্তচাপ নিচে নেমে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।

হজমে সমস্যা
পেট ভালোভাবে পরিষ্কার রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই। এর অভাবে ওজন বাড়ে। আর দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে অ্যালার্জি এবং হজমে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর অভাবে ক্ষুধা হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি বমি বমি ভাব এবং পেট ব্যথাও হয়।

পেটে আলসার
হজমে সাহায্য করার জন্য পেটে শতকরা ৯৮ ভাগ পানি এবং ২ ভাগ সোডিয়াম বায়োকার্বেনেট দরকার। কিন্তু পর্যাপ্ত পানি পানের অভাবে এর হজম প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ সুসম্পন্ন করতে পারে না। ফলে পরবর্তীতে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে গিয়ে আলসার হতে পারে।

জয়েন্টে ব্যথা
তরুণাস্থির জয়েন্টগুলো এবং হাড়ের সুরক্ষায় শতকরা ৮০ ভাগ পানির প্রয়োজন হয়। অন্যথায় পানি কম পান করলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা অনুভূত হয়।

পেশীর গঠন হ্রাস পায়
পর্যাপ্ত পানি পান না করলে দেহের মাংসপেশী সঠিকভাবে গঠিত হতে পারে না। কাজেই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পানের বিকল্প নেই।

অসুস্থতা বাড়ে
পানির অভাবে শরীরে কোন রোগ বাসা বাঁধলে তা সহজেই ছাড়তে চায় না। ফলে দীর্ঘদিন রোগে ভুগতে হয়। সেইসঙ্গে সবসময় অসুস্থতাও বোধ হয়।

ক্ষুধা মন্দা
পানির অভাবে শরীর সঠিক সিগন্যাল দিতে পারে না। ফলে দিন এবং রাতের কোন সময়ই ক্ষুধা অনুভূত হয় না। শরীরে তেমন একটা শক্তিও পাওয়া যায় না। অন্যদিকে পর্যাপ্ত পানি পানের ক্ষুধা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শক্তিও ফিরে আসে।

অকাল বার্ধক্য
আমাদের শরীরের ভিতরের এবং বাইরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গের জন্য প্রচুর পানি প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ত্বকে এর প্রভাব পড়বেই। তখন অকালেই বুড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

যাহোক দেহের নানা ক্ষতি এড়াতে প্রতিদিন প্রচুর পানি পানের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে গবেষকরা প্রতিদিন তিন লিটার কিংবা আট গ্লাস করে পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই