কমিশন-সচিব দ্বন্দ্বে আটকে গেল প্রজ্ঞাপন
অনেক জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্ক শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক- উপপরিচালকসহ ৪৭ জনের পদোন্নতি প্রায় চূড়ান্ত হলেও কমিশন এবং সচিব পর্যায়ে মত পার্থক্যের কারণে প্রজ্ঞাপণ জারি করা নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
ফলে সহসাই পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা কাটছে না। তাই পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নতুন পদের দায়িত্ব নিতে আরো বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, পদোন্নতির যে তালিকা শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়েছে তার মধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিষয়ে কমিশন সচিব ও বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটির (ডিপিসি) সভাপতি মাকসুদুল হাসান খানের আপত্তি রয়েছে। তাই তিনি ওই তালিকায় এখন পর্যন্ত সাক্ষর করেননি। ফলে তালিকার গেজেট প্রকাশ করতে পারছে না কমিশন।
অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, নতুন তালিকা নিয়ে কমিশন একমত থাকলেও বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষোভের কারনে কমিশনও পুরো বিষয়টি ফের খতিয়ে দেখছে। তাছাড়া দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বেশ কয়েকদিনের জন্য লন্ডন সফরে যাচ্ছেন। ফলে চলতি সপ্তাহে পদোন্নতির গেজেট প্রকাশিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
১০মে ( রোববার ) দিনভর শ্বাসরুদ্ধকর কমিশন সভা শেষে পাঁচ পরিচালকসহ ৪৭ পদে পদোন্নতি চূড়ান্ত হয়। দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, কমিশনের সচিব মাকসুদুল হাসান খান ও বিভিন্ন শাখার মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
কমিশন সভা সূত্রে জানা যায়, উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে মো. আক্তার হোসেন, মো. আবু সাইদ, মীর মো.জয়নুল আবেদীন শিবলী, মো. সৈয়দইকবাল হোসেন এবং বেগম শিরীন পারভীনকে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আর সাত সহকারী পরিচালককে উপপরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা হলেন সহকারি পরিচালক মো. সামছুল আলম, শেখ আবদুস সালাম, সৈয়দ আহমেদ, আবুবকর সিদ্দিক, রফিকুল ইসলাম (প্রশাসন) এবং রফিকুল ইসলাম (পটুয়াখালি)।
তবে পদোন্নতির প্রশ্নে শুরু থেকেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের বিষয়ে তীব্র আপত্তি করে আসছেন ডিপিসি’র সভাপতি ও দুদক সচিব মোঃ মাকসুদুল হাসান খান। এ নিয়ে কমিশন সভায় দুদকের একজন কমিশনার এবং সচিব মুখোমুখি অবস্থান নেন। দুদকের কমিশনার যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতির পক্ষে মত দেন। অন্যদিকে সচিব জ্যেষ্ঠতার বিষয়টি তুলে ধরেন। অবশেষে কমিশন তার ক্ষমতা বলে কর্মকর্তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদন্নোতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়।
পদোন্নতি পাওয়াদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর সোমবার প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশের জন্য বিজি প্রেসে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা সূত্রে আরো জানা যায়, রোববারের সভায় উপ-সহকারি পরিচালক থেকে ২৩ জনকে সহকারি পরিচালক হিসেবে এবং সহকারি পরিদর্শক থেকে ১২ জনকে উপসহকারী পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
তবে যারা পদোন্নতি পাননি তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা গেছে। কারন পদোন্নতির ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হযেছে বলে তাদের অভিযোগ। তবে কমিশনের বিভিন্ন সূত্রে বরাবরই বলা হয়েছে যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে এসব পদোন্নতি হবে।
এর আগে কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাকসুদুল হাসান খানের সভাপতিত্বে গত ২৭ এপ্রিল ও ৫ মে ডিপিসির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সময় এক প্রশ্নের উত্তরে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেছিলেন, কর্মকর্তাদের কাজের দক্ষতা বিবেচনা করেই পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। যারা কাজে দক্ষতার প্রমাণ রাখছেন, তারা তদবির না করলেও পদোন্নতি পাবেন। পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতাই মুখ্য বিষয়।রাইজিংবিডি
মন্তব্য চালু নেই