প্রতারনার শীর্ষে ডাঃ শায়লা আলম ও উপকূল ল্যাব
কমলনগরে ভুয়া রিপোর্ট ভোগান্তির চরমে রোগীরা
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা উপকূল ল্যাব এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের ভুয়া রিপোর্টের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকায় অসহায় দরিদ্র লোকজন তাদের চিকিৎসার জন্য কমলনগর স্বাস্ত্য কমপ্লেক্সে আসলে ডাক্তাররা পরীক্ষার জন্য উপকুল ল্যাবে পাঠান। ডাক্তারদের সাথে ল্যাব মালিকদের যোগসাজশে প্রতারনার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। হয়রানির শিকার হচ্ছে অসহায়, দরিদ্র রোগীরা। রোগীদের এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে যে, ভুয়া পরীক্ষার নামে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে উপকূল ল্যাব এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ও ডাঃ শায়লা আলম।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত রোগীদের ভীড় থাকা সত্বেও ডাঃ শায়লা আলম অধিকাংশ সময়ই উপকুল ল্যাবে গিয়ে রোগী দেখেন। তারা আরও জানান, ডাঃ শায়লা আলম একজন মেডিকেল অফিসার কিন্তু তার ভিজিটিং কার্ড ও প্যাডে লেখেন একজন গাইনী অভিজ্ঞ। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ডাঃ শায়লা আলম এর পোস্টিং হাজিরহাট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কেন্দ্রে (যাহা করুনানগর এলাকায় অবস্থিত)। কিন্তু শায়লা আলম সপ্তাহে ৭দিনই অবস্থান করার কথা থাকলেও তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে (করইতলা) অবস্থান করেন।
হাজিরহাট ইউনিয়নের একাধিক ব্যাক্তি জানান, যে ডাঃ শায়লা আলমকে আমার কখনই দেখিনাই। ৭ই মে ২০১৫ইং তারিখে আকবর হোসেন (৩০দিন) কে কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাঃ শায়লা আলমের কাছে নিয়ে গেলে তিনি জানান যে, জন্ডিস আছে এবং রক্তের সিরাম বিলরুবিন পরীক্ষা উপকূল ল্যাবে করান সেখানে পরীক্ষায় দেখা যায় তার রক্তে সিরাম বিলরুবিন এর পরিমান ১৫.৩৮। তাকে লক্ষ্মীপুর মিলিনিয়াম হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে ঐ তারিখেই লক্ষ্মীপুর সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে পরীক্ষায় দেখা যায় তার সিরাম বিলরুবিন এর পরিমান ৫.০৬।
এ ব্যাপারে আকবরের পিতা হেলাল উদ্দিন জানান, আমার ছেলে অসুস্থ হলে কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাঃ শায়লা আলমের কাছে নেই তিনি দেখে বলেন, জন্ডিস হয়েছে, রক্ত পরীক্ষা দিয়েছি উপকুল ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনেন। উপকুল ল্যাবে প্রায় ৩ঘন্টা অপেক্ষার পর রক্তের রিপোর্ট দিলে আমি ডাঃ সায়লাকে রিপোর্ট দেখাই। তখন তিনি রিপোর্ট দেখে আমাকে লক্ষ্মীপুর মিলিনিয়াম হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। আমি নিরূপায় হয়ে তাকে নোয়াখালী মেডিকেল কলেজের লেকচারার ডাঃ মোহাম্মদ নাছিরুজ্জামানের কাছে গেলে তিনি আকবরকে পুনরায় সিরাম বিলরুবিন পরীক্ষা করার কথা বলেন। আমি লক্ষ্মীপুর সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে পুনরায় ডাঃ এর কাছে গেলে তিনি জানান যে, নরমাল। সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রক্ত পরীক্ষায় দেখা যায় সিরাম বিলরুবিন এর পরিমান রয়েছে ৫.০৬ ।
তিনি আরও জানান, আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি এভাবে তারা রোগীদের সাথে প্রতারনা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। উপকুল ল্যাবের এমডি মাহফুজুর রহমান আলাপকালে জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক কোন লাইসেন্স আছে কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন লাইসেন্স এখনও পাই নাই। আপনার প্রতিষ্ঠানে আকবরের সিরাম বিলরুবিন রিপোট ১৫.৩৮ অথচ লক্ষ্মীপুর সেবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে তাহার সিরাম বিলরুবিন রিপোর্ট ৫.০৬ এক্ষেত্রে কি বলবেন। আমাদের রিপোট সত্য আমি রোগীর রক্ত অন্য ল্যাবেও পরীক্ষা করিয়েছি রিপোট একই।
কিভাবে রক্তের পরীক্ষা করিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি ল্যাবে এসে রোগীর থেকে রক্ত নিয়ে লক্ষ্মীপুরে গিয়ে অন্য ল্যাবে রক্ত পরীক্ষা করাই। রক্তের কনিকার ধারন ক্ষমতা কতক্ষন থাকে জানতে চাইলে তিনি জানান, রক্ত নেওয়ার ৪৮ঘন্টা পর্যন্ত পরীক্ষার ধারন ক্ষমতা থাকে। আকরামের বাবা লক্ষ্মীপুর থেকে রিপোর্ট নিয়ে আপনার ল্যাবে গেলে তাকে ম্যানেজ করার জন্য মাকসুদের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা দিতে চেয়েছেন কেন? তিনি তা অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে ডাঃ সায়লা আলমের সাথে আলাপকালে তিনি জানান, উপকুল ল্যাবের রিপোর্ট সত্য। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে আপনি উপকুল ল্যাবে যান এবং রোগী দেখেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন যে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাল বাথরুম না থাকায় সেখানে যেতে হয়। আপনিতো মেডিকেল অফিসার কিন্তু কার্ড ও প্যাডে দেখা যায় গাইনী অভিজ্ঞ লিখেছেন এমন প্রশ্ন করলে কোন উত্তর দেন নাই। কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএসও নিজাম উদ্দিন জানান, ডাঃ শায়ল আলম ডিউটিকালিন সময়ে উপকুল ল্যাবে রোগী দেখার বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন গোলাম ফারুক ভুঁইয়া জানান, যদি কোন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের লাইসেন্স না থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য চালু নেই