ওবায়দুল কাদেরের ‘অপ্রিয়’ বচন…
উচ্চ পর্যায়ের একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ করে ‘সময় নষ্ট’ করার কারণে আয়োজকদের তুলোধুনো করলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রচারকামী রাজনৈতিক নেতাদেরও একহাত নিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী তার এই সত্যকথনকে ‘অপ্রিয়’ বলে উল্লেখ করলেও আগ্রাবাদ হোটেলের ইছামতি হলের কানায় কানায় পূর্ণ উপস্থিত এমপি, কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা ও অতিথিরা হাততালি দিয়ে জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।
বুধবার সকালে চট্টগ্রাম চেম্বার ও ভারতীয় দূতাবাস আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া কানেক্টিভিটি: অপরচুনিটি অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’ শীর্ষক সেমিনানের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের।
বক্তব্য দিতে গিয়ে মন্ত্রী ভূমিকা শেষ করেই কথার তীর ছুড়তে থাকেন। এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংসদ এমএ লতিফ, দিদারুল আলম, ড. আবু রেজা নদভী, ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণসহ রাশিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনীতিক ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতারা।
মন্ত্রী বলেন, ‘এই ধরনের অনুষ্ঠান, সেমিনার, আলোচনা হচ্ছে, হবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এটা নিয়ে এত সময় নষ্ট করা? বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে সব কিছুই এখানেই ফাইনাল করে ফেলা? আপনারা (চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি) আমাকে এনে একটি সেমিনারের জন্য তিন ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছেন। আমি এসব পছন্দ করি না। যদি আমি এই তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রামের তিনটি রাস্তা পরিদর্শন করতে পারতাম, তাহলে হাজার মানুষের উপকার হতো।’
এক সময় দৈনিক বাংলারবাণী পত্রিকায় সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন ওবায়দুল কাদের। আর সেজন্যই বুঝি তিনি সাংবাদিকদের সীমাবদ্ধতার কথা বোঝেন! তাই অনুষ্ঠানের শুরুতেই আয়োজকদের উদ্দেশে বলেন, ‘একটি সেমিনারের জন্য সকাল থেকে এত সব মিডিয়াকর্মীকে আপনারা এনগেইজড করে রেখেছেন। কিন্তু চট্টগ্রামে আজকে মেট্রোপলিটন চেম্বারের বাণিজ্যমেলা উদ্বোধন করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তো তারা কোন দিকে যাবে, আমার কাছে আসবে নাকি উনার কাছে যাবে? তোফায়েল ভাইতো আমার চেয়েও অনেক সিনিয়র মন্ত্রী ও নেতা। ঢাকায় হলে কথা নেই, কিন্তু চট্টগ্রামে ক্যামেরার সংখ্যা কম। এসব বিষয় আমাদের বুঝতে হবে। রাজনৈতিক সভা, ব্যবসায়িক সভাগুলো করার সময় আমাদের এসব বিষয় খেয়াল রাখা উচিৎ।’
মান্না দে’র একটি জনপ্রিয় গানের কলির সঙ্গে মিলিয়ে সরকারের প্রভাবশালী এ মন্ত্রী বলেন, ‘কাগজে লেখা নাম মুছে যাবে। ফুলের তোড়া নষ্ট হয়ে যাবে। ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে যাবে। কিন্তু জনগণের মনের মাঝে নামটি লিখলে সেই নাম কখনোই মুছবে না কিংবা ছিঁড়বে না। আমি সেখানেই আমার নাম লেখাতে চাই, কাজের মাধ্যমে। সংবর্ধনা নিয়ে, জনসভায় গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দিয়ে, ফুল আর ক্রেস্ট নিয়ে খুশি আমি হতে চাইও না আর কাউকেও আমি সেই সুযোগ দিতে চাই না।’
জনগণ নয় মন্ত্রীই জনগণের কাছে দায়বদ্ধ উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেন, ‘এখন দেখা যায় কোন মন্ত্রী কোন এলাকায় গেলে জনগণসহ সকলকে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তাকে খুশি করতে বিভিন্ন স্লোগান-ব্যানার ফেস্টুন সাঁটানো হয়। বিভিন্ন উপহার দিতে হয়। এসব কেন? মন্ত্রীকে কেন জনগণ খুশি রাখবে? জনগণকেই মন্ত্রীকে খুশি রাখতে হবে। তারাতো ভোট দিয়ে মন্ত্রী হওয়ার সেই সুযোগ করে দিয়েছে। এই ধরনের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে।’
বাংলাদেশে এখন হাইব্রিড নেতার বাম্পার ফলন হচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন দেশে কর্মীর বড়ই অকাল পড়েছে। যেদিকে তাকাই শুধুই নেতা আর নেতা। দেশে এখন সব কিছুতেই হাইব্রিড চাষ হচ্ছে। রাজনীতিতেও হাইব্রিড ঢুকে যাওয়ার নেতার বাম্পার ফলন হচ্ছে। ছোট নেতা, বড় নেতা, পাতি নেতার পোস্টারে নগর শহর অলিগলি ভরে গেছে। ডিজিটাল পোস্টারে এসব নেতাদের ছবি দেখে অমার নিজেরও ভয় লাগে। এত বড়বড় গাল, বাহারি স্টাইলে ছবি। মাঝে মাঝে আমার ছবি দেয়ায় আমিও বিব্রত হই।’
সব ফুলেই ভালোবাসা নেই জানিয়ে কাদের বলেন, ‘মন্ত্রী হওয়ার পর অনেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমাকে ফুলের তোড়া দেয়। কিন্তু সব ফুলেই যে ভালোবাসা গন্ধ রয়েছে তা নয়। বেশিরভাগেই রয়েছে স্বার্থের গন্ধ। সেজন্য আমি অনেক ফুল গ্রহণ করি না।’
চট্টগ্রামের বিলবোর্ড প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমার প্রাচ্যের রাণী চট্টগ্রামের রূপ ঢেকে ফেলা বিলবোর্ড থাকুক তা কখনোই আমি সমর্থন করবো না। কারা এসব করে তা আমি জানি। সেকারণে যারা এসব ব্যবসা করে তারা আগে আমার সাথে যোগাযোগ রাখলেও এখন আমার কাছে আসে না। এসবের আমি পরোয়া করি না, যে কোনো মূল্যে বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে।’
পরিশেষে সেমিনারের মূল বক্তব্য দেয়ার আগে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনেক কথা বলে ফেলেছি, এসব অপ্রিয় কথার জন্য অনেকে আমাকে পছন্দ করে না। আপনাদের বলি, আমাকে ডাকবেন না, মানুষের কাছেও আমাকে আর অপ্রিয় বানাবেন না।’
মন্তব্য চালু নেই