এ সপ্তাহেই প্রিন্স মুসাকে দুদকে তলব!

চলতি সপ্তাহে আবারো আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী ও ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. মুসা বিন শমসেরকে (প্রিন্স মুসা) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ।

দুদকের ওই সূত্র জানান, দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে যে ১২ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি টাকায় ৯৩ হাজার ছয়শ কোটি টাকা) হিসাব দিয়েছেন তিনি, সে বিষয়ে প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতেই ফের তলব করা হবে। চলতি সপ্তাহেই তাকে তলব করে চিঠি দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সম্পদের অনুসন্ধান করতে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু শুধু মুসা বিন শমসেরের নামে দেওয়া চিঠির উত্তরে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের কোনো ব্যাংকে ওই নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে ওই ব্যক্তির নামে কোনো সম্পদও নেই। কিন্তু দুদকের জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সুইস ব্যাংকে তার ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থাকার কথা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রকৃত রহস্য উন্মোচনেই তার বক্তব্য নেওয়া প্রয়োজন। তাই তাকে তলব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সে বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করেননি।

এর আগে ২০১৫ সালের ৭ জুন সম্পদের বিবরণী দাখিল করেন আলোচিত অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। ওই বছরের ১৯ মে তার গুলশানের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাটকো’বরাবর সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদক।

সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা সাত বিলিয়ন ডলারের অনুসন্ধানে নামে দুদক। তবে অনুসন্ধান পর্যায়ে মুসার আরও পাঁচ বিলিয়ন ডলারের তথ্য পায় কমিশন। অর্থাৎ প্রিন্স মুসার মোট ১২ বিলিয়ন ডলার সুইস ব্যাংকে আটকে রয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯৩ হাজার ছয়শ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে)। এ নিয়ে মুসা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দুদককে জানিয়েছেন। তবে আইনগত বাধা-নিষেধের অজুহাতে ওই যৌথ অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য দুদককে দেননি মুসা।

এদিকে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে বলা হয়, এই অর্থ তিনি অস্ত্র ও ক্রুড অয়েলের ব্যবসা করে অর্জন করেছেন। সুইস ব্যাংকে রাখা ৯০ মিলিয়ন ডলারের স্বর্ণালঙ্কারের উৎস সম্পর্কে বলেন, সেসব অলঙ্কার তিনি বিভিন্ন সময় কিনেছেন ও উপহার হিসেবে পেয়েছেন। তবে তিনি এটিও উল্লেখ করেন, সুইস ব্যাংকে তার রাখা অর্থ ব্যাংকটি জব্দ করে রেখেছে। তিনি ওইসব অর্থ তুলতে পারছেন না। এগুলো তুলতে পারলে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন।

ওই তথ্যের সূত্র ধরে গত বছরের শেষ দিকে মুসার ওই সম্পদের অনুসন্ধান করতে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু মুসা বিন শমসেরের নামে দেওয়া চিঠির উত্তরে সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের কোনো ব্যাংকে ওই নামে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই। ফলে ওই ব্যক্তির নামে কোনো সম্পদও নেই। ওই জবাবের পরিপ্রেক্ষিতে মুসার স্ত্রী, সন্তানদের নামে কোনো অ্যাকাউন্ট রয়েছে কি-না তা জানতে আবারো চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

মুসার সম্পদের বিষয়ে দুদক সূত্রে আরো জানা যায়, মুসার ওই অর্থ ছাড়াও গাজীপুর ও সাভারে মুসার নামে বিভিন্ন দাগে প্রায় এক হাজার দুইশ’ বিঘা সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। খাতা-কলমে ওই জমির মালিক তিনি। ১৯৭২-৭৩ সালে এসব সম্পত্তি কিনেছেন তিনি। এসব সম্পত্তির বর্তমান মূল্য প্রায় এক হাজার দুইশ’ কোটি টাকার বেশি (এক বিঘা এক কোটি টাকা হিসাবে)। অধিকাংশ সময় মুসা দেশের বাইরে থাকায় এসব সম্পত্তির খাজনা পরিশোধ করে নামজারি করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে তিনি জমিগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

তবে সম্পদের বিষয়ে রহস্যজনক তথ্যের কারণে অনেকেই এটাকে ফাঁকা বুলি বলেছেন।

মুসা প্রসঙ্গে খোদ দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেছেন, “মুসা যত গর্জে, তত বর্ষে না। দুদকের কাছে তিনি বিশাল জমি-জমার হিসাব দিয়েছেন। তবে কোনো জায়গা তার দখলে নেই। আবার বিদেশে আটক ১২ বিলিয়ন ডলারের যে তথ্য দিয়েছেন, সেখান থেকে সেই তথ্যও পাচ্ছি না। আবার তিনিও কিছু দিতে পারছেন না। যতটা না করেছেন, তার চেয়ে বেশি বলেছেন তিনি’’।

প্রিন্স মুসার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই সময় বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে এ অনুসন্ধান শুরু করা হয়। তবে অজ্ঞাত কারণে দুদকের এ অনুসন্ধান আলোর মুখ দেখেনি। তিন বছর পর ২০১৪ সালের শেষের নাগাদ ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে আবারও নতুন করে মুসার সম্পদের অনুসন্ধানে নামে দুদক।

এরপর ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর দুদকের তৎকালীন জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক (বর্তমানে পরিচালক) মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলীকে প্রধান করে একটি অনুসন্ধান দল গঠন করে কমিশন। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রিন্স মুসা দুদকের তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জব্দকরা অর্থের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছিলেন।

২০১১ সালের ২৪ জুন মুসার যাবতীয় ব্যাংক হিসাব তলব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দুদকের চাহিদার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুসার ব্যাংক হিসাব তলব করলেও রহস্যজনক কারণে এর কোনো অগ্রগতি হয়নি।

২০১৪ সালে ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিন মুসা বিন শমসেরকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে বাংলাদেশি এ ধনাঢ্য অস্ত্র ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের সাত বিলিয়ন ডলার আটকে থাকার কথা বলা হয়েছিল।-রাইজিংবিডি



মন্তব্য চালু নেই