এ কেমন নির্মমতা : দু’বছরের শিশুর পা কেটে নিল আপন চাচা

বয়স মাত্র দুবছরের একটু বেশী হবে। পৃথিবীর আলো, বাতাস, রূপ, রস, গন্ধ, কোন কিছুরই স্বাদ, এখনো পুরোপুরি নেওয়া হয়নি তার। অথচ ভাল মন্দ বুঝার আগেই পৃথিবীর নিষ্ঠুর এক মানুষরূপী দানবের হাতে পা হারাতে হল ২ বছরের শিশু রাসেলের।

গত ২দিন যাবৎ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারে মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে ভয়ানক যন্ত্রনায় ছটফট করছে। শিশুটির পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। আর এমন নির্মম ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী সূর্য্যনগর গ্রামে। গত মঙ্গলবার পরিবারিক কলহের জের ধরে তারই চাচা বখাটে যুবক সন্ত্রাসী ইয়ার আলী ধারালো অন্ত্র দিয়ে আপন ভাতিজা রাসেলের বাম পায়ে নীচ থেকে কেটে বিছিন্ন করে ফেলেছে। মারত্মক রক্তাক্ত আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শিশুটিকে প্রথমে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় ও পারবারিক সূত্রে জানা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার দীঘলকান্দা গ্রামের নুর হক শেখের মেয়ে সাগরী বেগমের সাথে ভাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা সূর্য্যনগর গ্রামের হানিফ মোল্যার ছেলে মনির মোল্যার বিবাহ হয়। বিয়ের কিছুদিন পরই সাগরী বেগমের উপর বখাটে লম্পট দেবর ইয়ার মোল্যার কু-নজর পড়ে। স্বামী মনির মোল্যা মাইক্রোবাস চালক। বেশীর ভাগ সময় স্বামী মনির মোল্যা বাইরে থাকায় ইয়ার মোল্যার উত্ত্যক্তের কারণে সাগরী বেগম পিত্রালয়ে বসবাস করতো।

এ নিয়ে কিছুদিন আগেও ইয়ার আলীর কু-প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ভাবী সাগরী বেগমকে মারপিট ও কুপিয়ে জখম করে। তখন ভয়ে কেউ শালিশ বৈঠক বা আইনের আশ্রয়ও নেয়নি। পিত্রালয় থেকে স্বামীর বাড়ীতে যাওয়ার পর বখাটে ইয়ার পুনরায় ভাবীকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে। এক পর্যায়ে তার কথায় রাজি না হওয়ায় সামান্য পারিবারিক দ্বন্দে সোমবার দুপুরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ভাবীকে হত্যার চেষ্টার করে। এক পর্যায়ে সাগরী বেগম পালিয়ে গেলে ২বছরের শিশুপুত্র ভাতিজা রাসেলকে পেয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির পা কেটে বিছিন্ন করে ফেলে।

Untitled-1

গত বুধবার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটি পা হারিয়ে ভয়ানক যন্ত্রনায় ছটফট করছে। এ সময় কয়েকজন সংবাদকর্মী ছবি তুলতে গেলে শিশুটির পিতা ও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তাদেরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে শিশুটির মা সাগরী বেগমকে সংবাদকর্মীদের সাথে কোন প্রকার কথা না বলতে হুমকি দেয়। এদিকে ঘটনাস্থল সূর্য্যনগর এলাকার লোকজন নিস্পাপ শিশু নির্যাতনের মাধ্যমে পা বিছিন্ন করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় ইউপি মেম্বর সুরুজ মিয়া বলেন, ইয়ার আলী সন্ত্রাসী প্রকৃতির ও বখাটে। ২বছরের শিশুটির নির্মম ভাবে পা কেটে ফেলায় ভবিষ্যতে বিকলাঙ্ক হয়ে হাঁটতে হবে। এ ধরণের সন্ত্রাসীদের বিচার হওয়া উচিৎ। শিশুটির মা সাগরী বেগম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ সে আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছে। ঘটনার দিন আমাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাড়া করে। পরে আমার শিশু পুত্রকে পেয়ে তার পা কেটে বিছিন্ন করে ফেলে। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

শিশুটির নানী জানান, আমার জামাই বেশীর ভাগই বাড়ীতে না থাকায় আমার মেয়েকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো। নির্মমভাবে যে ভাবে শিশুটির পা কেটে নিয়েছে, আমরা ওর উপযুক্ত বিচার চাই। শিশুটির মামা ইনছান শেখ ও খালা তাছলিমা বেগম জানান, পায়ের কাটা বিছিন্ন অংশসহ মারাত্মক আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে নিয়ে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে ডাক্তার বিছিন্ন কাটা অংশটি ফেলে দিয়েছেন।

তারা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, শিশুটি জীবন ফিরে পেলেও সারাজীবন পঙ্গু হয়ে থাকবে। তারা বলেন শিশুটি কিছুটা সুস্থ্য হয়ে উঠলে আমরা মামলা করব। এলাকাবাসীসহ সর্বস্তরের জনগণ অবিলম্বে এই বখাটে শিশু নির্যাতনকারী লম্পটের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছে।



মন্তব্য চালু নেই