এ’ কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, মাঝখানে কাটাতারের বেড়া বয়ে যায়…

এ’ কূলে আমি আর ওই কূলে তুমি, মাঝখানে কাটাতারের বেড়া বয়ে যায়…। পহেলা বৈশাখে দু’বাংলার হাজারো মানুষ এক হয়েছিলেন ভৌগলিক ও রাজনৈতিক বিভক্তি ভুলে, কিছু সময়ের জন্য। তবে মাঝখানে ঠিকই ছিল কাটাতারের বেড়া। সোমবার পহেলা বৈশাখে পঞ্চগড় সদরের অমরখানা সীমান্তে বসবাসকারী দু’দেশের স্বজনদের এ মিলনমেলা স্থায়ী হয় দুঘণ্টারও কিছু বেশি। সীমান্তের ৭৪৪ নম্বর মেইন পিলারের ১ থেকে ৭ নম্বর সাব পিলার পর্যন্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়ার দুপাশে জড়ো হয়েছে হাজারো নারী-পুরুষ-শিশু। বেড়ার ফাঁক দিয়ে কথা বলছে স্বজনদের সঙ্গে। প্রায় সবারই হাতে ছিল কিছু না কিছু উপহার সামগ্রী। নানা ধরনের উপহার তারা কাঁটাতারের ওপর দিয়ে স্বজনদের উদ্দেশে ছুড়ে দেয়। কথা বলা, হাসিকান্না, ভাববিনিময়- এমনি টুকরো টুকরো বহু দৃশ্য মুখর করে রেখেছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা। স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে সাইকেল, ভ্যান, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, মিনিবাসসহ নানাভাবে দুপরের লোকজন এসে ওই এলাকায় জড়ো হতে থাকে। এপারের পঞ্চগড়সহ পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী এবং ভারতের জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ-শিশু স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষা থাকে। অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নুরুজ্জামান জানান, সকাল থেকে দুদেশের সীমান্তে লোকজন জড়ো হতে থাকে। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ওপারের লোককে প্রথমে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসতে না দিলেও শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করে। পরে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। তবে, আরো বেশি সময় ধরে লোকজন সেখানে অবস্থান করছিল। প্রায় ৪০ বছর পর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ায় আবেগাপ্লুত পঞ্চগড় সদরের ধাক্কামারা ইউনিয়নের মালাদাম গ্রামের আমেনা বেগম (৭৫)। ভাই জিয়াউদ্দিন ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রাজগঞ্জ থানার বড়ভিটা গ্রামের বাসিন্দা। আমেনা বেগম বলেন, “প্রথমে ভাইকে চিনতে পারিনি। পরে এক আত্মীয় তাকে চিনিয়ে দেয়। ভাইকে দেখার অনেক দিনের আশা আমার পূরণ হয়েছে।” কাঁটাতারের বেড়ার ওপাশ থেকে রাজগঞ্জের প্রধান পাড়ার দেলাওয়ার হোসেন (৭০) জানান, “দুই বছর পর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার নাতনিকেও দেখলাম। কাঁটাতার না থাকলে নাতনিকে একটু কোলে নিতাম। তবুও দেখা হওয়ার এ অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।” স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার পর সীমান্তবর্তী এ এলাকার অনেকের আত্মীয়স্বজন ভারতীয় অংশে থেকে যায়। ১৯৭০ এর দশকেও উভয় দেশের লোকজন প্রায় বিনা বাধায় যাতায়াত করতে পারলেও ৮০’র দশকে তা থেমে যায়। পরবর্তীকালে পাসপোর্ট ও ভিসা চালু হওয়ায় আত্মীয়-স্বজনদের যোগাযোগ একেবারে কমে যায়। তাই বাংলা সালের প্রথম দিনটির জন্য তারা অপেক্ষা করেন প্রতিবছর। পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি থাকলেও দুপারের বাঙালিদের সাক্ষাতের বিষয়ে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।” এরপরও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দুপারের স্বজনদের সাক্ষাৎ সম্পন্ন হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই