এসপির স্ত্রী হত্যা : এত আলামত তবু হদিস মিলছে না খুনিদের!
পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকান্ডের আলামত ও তথ্য-উপাত্তের কমতি নেই পুলিশের হাতে। তবু খুনিদের শনাক্ত করতে পারছে না পুলিশ।
হত্যাকাণ্ডের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই আশার বাণী শোনাচ্ছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সব সংস্থার কর্মকর্তারা। তদন্তকাজে নেমে মামলার তথ্য-উপাত্ত হিসেবে হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত যানবাহন ও সন্দেহজনক খুনিদের আটকের খবর দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন হয় ব্যবহৃত উপকরণ, নয়তো সন্দেহভাজনকে আটক করে মিডিয়ায় চমক দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিশ্চিত করে কোনো চমক দেখাতে পারেনি পুলিশ।খরব: ঢাকাটাইমস
চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের পর দেশের সবচেয়ে আলোচিত এলিট ফোর্স র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই), সিআইডিসহ প্রশাসনের একাধিক সংস্থা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ করছে মাঠে। কিন্তু গত পাঁচ দিনে কেউ কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার সর্বশেষ সংবাদ ব্রিফিংয়ে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, তদন্তে বলার মতো নতুন কোনো অগ্রগতি নেই। সর্বশেষ গত বুধবার রাতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সন্দেহভাজন সেই কালো মাইক্রোবাস ও তার চালক জানে আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর আগে সন্দেহজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয় শিবিরকর্মী আবু নছর গুন্নুকে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ এলাকার মুসাবিয়া ফখিরের মাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আবু নছর গুন্নু ওই মাজারের খাদেম। পুলিশ তার বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততার কথা বললেও একটি মহলের দাবি, মাজার নিয়ে বিরোধের জের ধরে একটি মহল গুন্নুকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
পুলিশ গত মঙ্গলবার সকালে গুন্নুকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানায়, তাকে আদালতে তুলে রিমান্ড চাওয়া হবে, কিন্তু সেদিন তাকে আর আদালতে তোলা হয়নি। এক দিন পর বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড চান চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার।
মঙ্গল ও বুধবার দুই দিনের জিজ্ঞাসাবাদে গুন্নু জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেন বলে পুলিশ দাবি করে। তবে মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত কি না সে বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নগরীর চকবাজার এলাকার শুলকবহর বড় গ্যারেজ থেকে জব্দ করার পর এর মালিক ও কাপড় ব্যবসায়ী আবদুর রহিমকে আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মোটরসাইকেলটি তার নয় এবং এতে ব্যবহৃত নম্বর প্লেটটিও ভুয়া বলে জানায় পুলিশ।
এর আগে হত্যাকাণ্ডের পর রাতে নগরীর চকবাজার থেকে ছাত্রশিবিরের চারজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। বলা হয়, সন্দেহজনকভাবে তাদের আটক করা হয়েছিল। মিতু হত্যাকা-ে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এরও আগে ঘটনাস্থল থেকে খুনের নানা আলামত ও উপকরণ সংগ্রহ করলেও তা দিয়ে খুনিদের শনাক্তে কোনো আগ্রগতি নেই। বরং এসব আলামত ও উপকরণের কোনোরকম ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হয়েছে বা হচ্ছে কি না এ ব্যাপারেও কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার ঘটনা পুরো পুলিশ বিভাগের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাই হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনে নিরলসভাবে কাজ করছে সবাই। প্রকৃত খুনিরা যেন ধরা পড়ে, সে ব্যাপারে যাচাই-বাছাই চলছে।
ইকবাল বাহার বলেন, মাইক্রোবাসচালক জানে আলম ঘটনাস্থলে পুরো ঘটনাটিই দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। হয়তো তার কাছ থেকে হত্যাকা-ের নতুন কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া মাইক্রোবাসটিও এ হত্যাকা-ে ব্যবহৃত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই