এসএসসি’র মতো এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁস অব্যাহত

এসএসসি পরীক্ষার মতো এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও প্রশ্নফাঁস অব্যাহত রয়েছে। পরীক্ষার আগেই হোয়াটসআপ, ফেসবুকে হুবহু প্রশ্ন পেয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার আগে মোবাইল নিয়ে শিক্ষার্থীদের হুলস্থুলও দেখা গেছে বিভিন্ন পরীক্ষার আগে। প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও। ফলে এবার পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

রাজধানীর তেঁজগাঁও মহিলা কলেজ ও তেজগাঁও কলেজ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতি পরীক্ষার কমপক্ষে আধাঘণ্টা আগে মোবাইল নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিলের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষা এবং ১১ এপ্রিলের জীববিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সাথে হুবহু মিলে যায়।

এরই মধ্যে বুধবার রাজধানীর প্রতিটি কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে আধাঘন্টা পূর্বে পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশ করা নির্দেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে তেজগাঁও কলেজে গিয়ে দেখা যায়, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন। আর এর পরে আসা শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এ সমস্যা দূর করতে এবার তারা হার্ডলাইনে রয়েছেন।

তিনি বলেন, ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ করার বিধান আগেই ছিল। কিন্তু এটা কেউ মানত না। কিন্ত এটিতে কড়াকড়ি করা হয়েছে, সামনেও এ বিষয়ে কড়াবড়ি থাকবে। আর এটা কেন করেছি সেটা তো বোঝেনই।

বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষা শতভাগ স্বচ্ছ হয়েছে দাবি করলেও অন্য পরীক্ষায় অনিয়মের কথা স্বীকার করেছেন বোর্ড প্রধান মাহবুবুর রহমান। বিভিন্ন কেন্দ্র পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিটি পরীক্ষার দিন দেখলাম ৯ টা ৫ মিনিট, ৯ টা ১০ মিনিটে মোবাইলে এমসিকিউ চলে গেছে। বায়োলজি প্রথম পত্রের দিনে দেখলাম ব্যাপক ছেলে দৌড়াদৌড়ি করতেছে ৯ টা ৫-১০ মিনিটের দিকে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মাহবুবুর রহমান বলেন, পরীক্ষা শুরু হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তারা কেন্দ্রে ঢুকতেছে না। সাড়ে ৯ টা থেকে তো মোবাইল আর বই সমানে দেখা শুরু করছে। এমসিকিউ পেয়ে গেছে সবাই। বাপ-মা যাচ্ছে, ভাই যাচ্ছে; বন্ধুরা গোল হয়ে দেখছে। এসব কারণেই ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষা হলে ঢোকার বাধ্যবাধকতা মানার নির্দেশ দিয়েছি।

তিনি বলেন, কেন্দ্র সচিবদের বলে দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৯টার পর কেউ ঢুকলে তাকে বাধা দিতে হবে, প্রশ্নবানে জর্জরিত করতে হবে।
এর সাথে শিক্ষকরা জড়িত জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢাকার কোন কেন্দ্রের কোন শিক্ষক প্রশ্ন তুলে ছেড়ে দিচ্ছে। এটা তো বাইরে হচ্ছে না, ঢাকা থেকেই হচ্ছে। এ কারণে সাড়ে ৯ টার পর প্রশ্ন খুলতে বলা হয়েছে এখন। আর কতগুলো কেন্দ্র নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। যেখানে হৈচৈ হয়। এবার কড়াকড়ি করেছি সেসব কেন্দ্রে, এখন ঠিক হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ১০-১১ জন শিক্ষককে এবার সাজা দেওয়া হয়েছে। মোবাইল পেলেই তাদের মোবাইল কোর্টে দেওয়া হবে। আর কালো গ্লাসের গাড়ি ব্যবহার করে প্রশ্ন নেওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এবার তেঁজগাঁও মহিলা কলেজসহ ৪টি কলেজের প্রশ্নবাহী গাড়ি আটক করা হয়েছে। আমরা এখন হার্ডলাইনে চলছি, দেখা যাক কতটা পারি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এত পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যেও তারা এসব করছে। কি করব শিক্ষকরা, গার্ডিয়ানরা, খারাপ হলে, আমরা খারাপ হলে। বাবা-মা পাগল হয়ে যায়, শিক্ষকরা পাগল হয়ে যায়। এসব বন্ধ করতে হবে।



মন্তব্য চালু নেই