এর জন্য সাকিবের আক্ষেপ থাকতেই পারে
ব্যাটে-বলে সমান তালে পারফর্ম করাই সাকিব আল হাসানের কাজ। দক্ষতার সঙ্গে এই কাজটি রীতিমতো করে যাচ্ছেন বলেই এখনো টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার তিনি। কিন্তু এতে যদি কেউ বাগড়া বসায়, তাহলে সাকিবের আক্ষেপ হতেই পারে।
বিশ্বকাপের কথাই ধরুন, আসরটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বেশভালো খেলেছে। তবে একজন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে নিজেকে অতটা মেলে ধরতে পারেননি সাকিব। তারপরও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই সেরা পাঁচের মধ্যে তৃতীয় হন তিনি।
ক্রিকেট মহাযজ্ঞে খানিকটা নিস্প্রভ পারফরম্যান্সের জন্য সাকিবকে মূল্য দিতে হয়েছে হাতে-নাতে। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের কাছে ওয়ানডেতে সেরা অলরাউন্ডারের জায়গাটা ছেড়ে দিতে হয়েছে তাকে।
এ ছাড়া বাংলাদেশের যে কোনো আন্তর্জাতিক কিংবা ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেললে ব্যাটিংয়ে-বোলিংয়ে দুই বিভাগেই সেরা পাঁচের মধ্যে থাকেন সাকিব। তাই পাক্কা অলরাউন্ডার হিসেবে সাকিবের তুলনা বোধ হয় সাকিবই!
এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত ওয়ানডে সিরিজে আসা যাক। ১৬ বছর পর সফরকারীদের বাংলাওয়াশ করলেন টাইগাররা। কিন্তু ব্যক্তি সাকিবের প্রাপ্তি কী? এই টুর্নামেন্টে হয়তো আক্ষেপেই পুড়েছেন তিনি।
কেননা পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে বল হাতে কিছুটা পারফর্ম করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। তাও আবার পুরোপুরি নয়। শেষ দুই ওয়ানডেতে ১০ ওভার করে বোলিংয়ের সুযোগ পেলেও প্রথম ওয়ানডেতে হাত ঘুরাতে পেরেছেন ৯.২ ওভার। তিন ওয়ানডে মিলে সাকিবের ভান্ডারে জমা পড়েছে ৫ উইকেট। যা টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রেখেছে তাকে। ৬ উইকেট নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনার আরাফাত সানী।
বল হাতে যা-ও একটু আছে, কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট ধরার সুযোগটা সাকিবের কপালে জুটেছে খুব সামান্যই। শেষ ওয়ানডেতে তো ব্যাটিংয়ের জন্য মাঠেই নামতে হয়নি তাকে। সিরিজে ব্যাট হাতে সাকিবের মাঠে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে মাত্র ৫১ মিনিট। মোকাবিলা করেছেন ৩২ বল। নামের পাশে যোগ করেছেন মাত্র ৩৮ রান! যার কারণে তিনি ছিটকে পড়েছেন সিরিজে সর্বাধিক রান সংগ্রাহকের সেরা পাঁচের তালিকা থেকে।
এই পরিসংখ্যান হয়তো প্রভাব ফেলতে পারে সাকিবের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের র্যাংকিংয়েও। তাই এর জন্য সাকিবের আক্ষেপ থাকতেই পারে। আর সেজন্য এককভাবে তিনি হয়তো দায়ী করবেন ওই অসহায় পাকিস্তানকেই, যারা কিনা সিরিজে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। পারেনি বাংলাদেশের উইকেট ভাঙতে, যার মধ্য দিয়ে সাকিব ব্যাট ধরার সুযোগ পেতেন।
তবে এই আক্ষেপ বোধ হয় দেশসেরা এই ক্রিকেটারের এখন নেই। কেননা ১৬ বছর বছর ধরে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নামক ‘সোনার হরিণটি’ কে তাড়া করতে করতে টাইগাররা ছিলেন ক্লান্ত। ছিলেন জয়ের জন্য ক্ষুধার্তও। অবশেষে সেই হরিণটি টাইগারদের হাতে ধরা দিয়েছে। এতে আপাতত কিছুটা হলেও ক্ষুধা মিটেছে তাদের।
এদিকে পাকিস্তানকে চুনকাম (বাংলাওয়াশ) করে দিয়ে যে লজ্জটা তাদের দিলেন মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিকরা তা কোনোদিন ভুলবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। পাক অধিনায়ক আজহার আলী এবং কোচ ওয়াকার ইউনুসের চোখের সামনে এই স্মৃতি ক্ষণে ক্ষণে ভেসে উঠবে। এতে সন্দেহ রাখার কোনো উপায় নেই। জীবনে যা প্রথম, তা-ই স্থায়ী স্মৃতিতে ঠাঁই পায়।
মন্তব্য চালু নেই