এরপর কার পালা?

আবার একজন ব্লগারকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হলো। মঙ্গলবার সিলেটে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন অনন্ত বিজয় দাশ নামে এক ব্লগার। সকালে অফিস যাওয়ার পথে বাসার কাছেই তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঠিক একই কায়দায় হত্যা করা হয় ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায় ও ওয়াসিকুর রহমান বাবুকে। এভাবে একের পর এক হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কিত ব্লগার ও মুক্তচিন্তার মানুষেরা। সবার প্রশ্ন, এরপরে কার পালা। এভাবে কি হতাকাণ্ড ঘটেই যাবে? এসব হত্যার বিচার না হওয়াকেই নতুন হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, যারা ব্লগে লিখছেন, ধর্মীয় বিষয় নিয়ে নিজের মতামত প্রকাশ করছেন এমন লোকদের বিশেষ টার্গেটে নিয়েছে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। এজন্য আলাদা আলাদা হিটলিস্ট তৈরি করছেন তারা। উগ্রপন্থিদের এমন হিটলিস্টে আছেন কমপক্ষে ৮৪ জন। এই ৮৪ জনের মধ্যে শুধু যে ব্লগার রয়েছেন তা নয় রয়েছেন প্রগতিশীল দলের সংগঠক, বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলনের সংগঠক, মুক্তমনা, প্রগতিশীল লেখক ও সাংবাদিক। প্রাথমিক পর্যায়ে জঙ্গিরা হুমকি দেবে তাতে কাজ না হলে চিরতরে সরিয়ে দেবে।

লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। বলা চলে, ক্লু না থাকায় তদন্ত অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। যদিও তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, তারা সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে তারা পরিষ্কার ধারণাও পেয়েছেন। কিন্তু এখনও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করতে পারেননি।

অপরদিকে একই অবস্থা ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকাণ্ডের তদন্তেও। হত্যাকাণ্ডের সময় স্থানীয় লোকজন যে দুই খুনিকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিল এর বাইরে আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সময় তারা ৫-৬ জন ছিল বলেও স্বীকার করেছিল গ্রেপ্তারকৃত দুই তরুণ। ঘটনার পরপরই তারা পালিয়ে যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। কিন্তু অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।

অপরদিকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের ৩২ দিনের মাথায় গত ৩০ মার্চ তেজগাঁওয়ের দক্ষিণ বেগুনবাড়ি এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে একই কায়দায় খুন হন আরেক ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু। সকালে বাসা থেকে বেড়িয়ে কয়েক গজ হেঁটে যেতে না যেতেই পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাবুর। আর পালিয়ে যাওয়ার সময় এক হিজড়ার সহায়তায় স্থানীয় লোকজন দুই দুর্বৃত্তকে ধরে ফেলে। গ্রেপ্তারের পর তারা সাংবাদিকদের কাছে আদর্শগত বিরোধের জের ধরেই তাকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে। বর্তমানে দুটি ঘটনায় তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি।

শুধু খুন নয়, এর দুই দফায় আঘাতের শিকার হন ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন। ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি রাতে উত্তরায় নিজ কার্যালয়ের সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয় তাকে। একই বছরের ৭ মার্চ রাতে মিরপুরের পূরবী সিনেমা হলের কাছে কুপিয়ে জখম করা হয় ব্লগার সানিউর রহমানকে।

২০১৩ সালের জুনে এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় কোপানো হয় গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার রাকিব আল মামুনকে। এর বাইরে উগ্রপন্থিদের হাতে বিভিন্ন সময় খুন হয়েছেন আরো অনেক প্রগতিশীল ব্যক্তিত্ব। ব্লগার ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পেছন থেকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিটিতেই টার্গেট ছিল মস্তিষ্ক ও মাথা। কারণ উগ্রপন্থিরা মনে করে, মস্তিষ্কই তাদের মূল আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু। পেছন থেকে কোপানো হয়, যেন চেহারা না দেখা যায়।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও ব্লগার ইমরান এইচ সরকার বলেন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা দিতে উদাসীন। ব্লগারদের হত্যা করছেন ধর্মান্ধরা। হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও তা সম্পর্কে ক্লু দিতে পারছে না পুলিশ। হত্যাকারীরা প্রশ্রয় পেয়ে আরো বেশি শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ পাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, ব্লগার ও মুক্তমনা লেখকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবা হচ্ছে।



মন্তব্য চালু নেই