এমসিকিউ বাতিলের পরামর্শ শিক্ষাবিদদের

বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) পরীক্ষা বাতিল এবং সহজপাঠ্য বই তৈরিসহ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তারা এ পরামর্শ তুলে ধরেন।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন- অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, ড. ফরাস উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শিক্ষকরা সৃজনশীল বোঝেন না। তারা জানেন না কীভাবে পড়াতে হবে, কীভাবে প্রশ্ন করতে হবে। সৃজনশীল না বোঝার কারণে শিক্ষকরা ঝুঁকছেন গাইড বইয়ের দিকে। শিক্ষার্থীদেরও তারা বোঝাতে পারেন না। অভিভাবক ছুটছেন কোচিং সেন্টারের দিকে, প্রাইভেট টিউটরের দিকে।’

তিনি এর সমাধান হিসেবে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধানে একটি সেন্ট্রাল প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে অসংখ্য প্রশ্ন থাকবে। এর সহায়তায় শিক্ষকরা সৃজনশীলতাকে বোঝাতে পারবেন, পড়াতে পারবেন, প্রশ্নও করতে পারবেন। এ প্রশ্ন ব্যাংক থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে। এমন একটি প্রশ্ন ব্যাংক হলে শিক্ষর্থীরা দিকনির্দেশনা পাবে এবং অভিভাবকের ছুটোছুটি বন্ধ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

সরকারি স্কুলগুলোকে পুরোপুরি ক্যাডেট কলেজের নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারলে শিক্ষার গুণগতমানের পরিবর্তন হবে মন্তব্য করে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলা স্কুলগুলোর পড়াশোনা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি অর্থয়ানে পরিচালিত ক্যাডেট স্কুলগুলো বাহিরের প্রভাবমুক্ত থাকায় তারা এগিয়ে যাচ্ছে।’ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার সোনার খাঁচা তৈরি হচ্ছে, গানের পাখিটা আসছে না।’

এসময় নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের কারণে নকলের প্রবণতা বাড়ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এজন্য এমসিকিউ প্রশ্নের নম্বর কমিয়ে আনার পক্ষেও মত দেন। তিনি বলেন, ‘এমসিকিউ ১৫-তে নামিয়ে আনতে হবে। নকল ঠেকাতে নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নও দুই বা তিন বাক্যে করতে হবে। এমসিকিউ বাদ দেয়া গেলে আরো ভালো হয়।’

পরীক্ষাকে ‘ফেল’ করানোর পদ্ধতি আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ফেল করানোর এ পদ্ধতির মাধ্যমে অযোগ্য, চিটাগুলো ঝেড়ে ফেলা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে সবাই পাস করছে। সবাই পাস করলে পরীক্ষা নেয়ার কী দরকার?’

বইমুখি জাতি গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নিতে আরো বলেন, ‘লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ লাইব্রেরিই নেই। প্রতিটি স্কুলে লাইব্রেরি তৈরি করতে হবে। পরিপূর্ণ সৃজনশীল জাতি গঠন করতে হলে আগে বইমুখী জাতি তৈরি করতে হবে।’

এসময় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, ‘শিক্ষার তিনটি ভিত্তি হলো: শিক্ষক, বই এবং পরীক্ষা। শিক্ষকের বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কারণ এ দিক দিয়ে আমরা খুবই দুর্বল। জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় হলে ভালো শিক্ষক পাওয়া সম্ভব হবে।’



মন্তব্য চালু নেই