এমন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আর হয়নি: আ.লীগ

গতকাল অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এসব কথা বলেন।

এর আগে সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে নজিরবিহীন কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব এমন নির্বাচন নাকি আর কখনও দেখেননি। তার কথা শুনে আমার মনে হলো, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নাকি আসমান থেকে এসেছেন। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করতে চাই, এমন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কি তিনি আর কখনও দেখেছেন?

এ সময় বিএনপির শাসনামলে বিভিন্ন নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়মের প্রসঙ্গ তুলে আনেন হানিফ।

বিএনপির ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা নতুন কিছু নয়, অতীতে যতটি নির্বাচনে বিএনপি পরাজিত হয়েছিল, তার ফলাফলকেই তারা প্রত্যাখান করেছে। তাদের চিন্তা হলো নির্বাচনে ফলাফল তাদের অনূকুলে হলে সঠিক, তা জনগণের রায়। জনগণের রায় প্রত্যাখান করে জনগণকে অপমান করেছে বলে মনে করেন তিনি।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অর্জন কী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অর্জন অনেকগুলো। তার মধ্যে অন্যতম হলো যে রাজনৈতিক দলটি (বিএনপি) এ সরকারকে মানে না, এই নির্বাচন কমিশনকে মানে না সে রাজনৈতিক দল বিএনপি এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করেছে এটি একটি বৈধ সরকার, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে তারা নির্বাচন করতে পারবে। এটাই সরকারের বড় সফলতা।

হানিফ বলেন, আমরা বরাবরই জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেসব পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন সেখানে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে আমাদের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। কিন্তু আমরা তো মেনে নিয়েছি।

শেষ সময় পর্যন্ত নির্বাচনে থাকায় বিএনপিকে আবারও সাধুবাদ জানান হানিফ। পাশাপাশি তিনি নির্বাচনে নানাভাবে সহযোগিতা করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, এ নির্বাচনকে বিএনপি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নয়, ষড়যন্ত্র হিসেবে নিয়েছিল। তারা যদি সত্যিকার অর্থে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিত, তাহলে তাদের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রচারে অংশ নিতো। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা প্রচারে অংশ নেয়নি। নির্বাচনের আচারণবিধি অনুযায়ী কোনো বাধা ছিল না। আমরা এমনও শুনেছিলাম বেগম খালেদা জিয়াও প্রচারে অংশ নেবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও যাননি।

এসময় তিনি বলেন, হয়তো এমন হতে পারে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নিয়ে যে কটাক্ষ করেছেন এর জন্য জনরোষের ভয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামেননি। আর সম্প্রতি বেগম জিয়ার স্বাধীনতাবিরোধী বক্তব্যে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে তাদের প্রার্থী ও কর্মীরা শঙ্কিত ছিল। জনরোষের ভয়ে ভোটকেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট না থাকলে তার দায়ভার আ.লীগ নিতে পারে না।

বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আ.লীগের মূল্যায়ন কী সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থী বাছাইয়ে আমরা খুব কম সময় পেয়েছিলাম। এত অল্প সময়ে তৃণমূল থেকে সঠিক প্রার্থী বাচাই করা খুবই দুরূহ কাজ ছিল। তারপরও আমরা প্রার্থিতা বাছাই করেছি এর মধ্যে ৯০ ভাগ সঠিক ছিল। হয়তো ১০ ভাগ প্রার্থীর মধ্যে দুর্বলতা থাকতে পারে। তারপরও যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করেছে এবং নির্বাচিত হয়েছে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। চূড়ান্ত বহিষ্কারে বিষয়ে আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ নির্বাচনে দেশবাসী একটি বার্তা পাবে এমন কথা আমরা আগেই বলেছিলাম উল্লেখ করে হানিফ বলেন, এ ভোটের মাধ্যমে আমরা আশস্ত হয়েছি দেশের জনগণ বোমাবাজ, সন্ত্রাসী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে প্রত্যাখান করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এবং শাস্তির পথে তাদের রায় দিয়েছে।

ক্ষমতায় থাকতে দুর্নীতি, স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষালম্বন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যসহ বিভিন্ন কারণে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী সদস্য এনামুল হক শামীম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুল হাসান রিপন প্রমুখ।



মন্তব্য চালু নেই