‘এভাবে বন্দুকযুদ্ধ প্রশ্ন ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে’

শফিক আহমেদ : দুই জঙ্গি তরুণকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার কথা শুনে বিস্মিত হয়েছি। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গি সন্দেহে অভিযুক্ত কয়েকজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেল। এভাবে মৃত্যু না ঘটিয়ে তাদের স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু বিচার করতে পারলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা পেত, বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদ্ঘাটন করা ছিল পুলিশের প্রথম ও প্রধান কাজ। কিন্তু এভাবে বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ার ঘটনা প্রশ্ন ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে।

ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় ‘বন্দুকযুদ্ধ’ শব্দের স্থান নেই। তবে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র আক্রমণ হলে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে পারে। সেই পরিস্থিতি হয়েছে কি না, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চায় জনগণ।

এখনকার মতো পরিকল্পিত বা গুপ্তহত্যা অতীতে ছিল না। আইনের শাসনে বাধা সৃষ্টি করার জন্য পরিকল্পিত হত্যা করা হচ্ছে। অন্য ধর্মের মানুষের ওপর যেমন আঘাত করা হচ্ছে, তেমনি স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। এসব হত্যার পেছনে যারা আছে বা যারা অভিযুক্ত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু এভাবে মেরে ফেলা বিবেকবান ও সচেতন কেউ সমর্থন করতে পারে না।
মাদারীপুরে কলেজশিক্ষককে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় স্থানীয় জনতা একজনকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চেয়েছে। আদালত রিমান্ডও দিয়েছেন। রিমান্ড দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, হাতেনাতে ধরা পড়া ওই তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অন্য যারা হত্যায় অংশ নিয়েছে তাদের সম্পর্কে জানা এবং জঙ্গিবাদের শেকড় সম্পর্কে অবহিত হওয়া। কিন্তু রিমান্ডের প্রথম দিনই তাকে মেরে ফেলা হলো। আদালতে হাজির করার সময় তাকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরা দেখা গেল, কিন্তু তাকে নিয়ে অভিযানে বের হওয়ার সময় গেঞ্জি পরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ধরে নিলেও প্রশ্ন থাকে, তাকে নিয়ে অভিযানে বের হওয়ার সময় বেশিসংখ্যক পুলিশ যায়নি কেন? তাহলে তো আরও কিছু জঙ্গি গ্রেপ্তার করতে পারত। একইভাবে অভিজিৎ রায় হত্যায় জড়িত সন্দেহে যাকে মেরে ফেলা হয়েছে, তাকেও বাঁচিয়ে রাখা জরুরি ছিল।

বিচার নিজস্ব গতিতে চলা উচিত। আমাদের দেশে বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার নিষ্পত্তি কিন্তু হয়েছে বিচারিক প্রক্রিয়ায়। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, বিডিআর হত্যা মামলা, মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীদের অপরাধের বিচার কিন্তু সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। এসব বিচার করাও এমন কঠিন কাজ নয়।

লেখক : সাবেক আইনমন্ত্রী 


(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। আওয়ার নিউজ বিডি’র সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আওয়ার নিউজ বিডি আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না)



মন্তব্য চালু নেই