বরেন্য সাংবাদিক এবিএম মূসা আর নেই

এবিএম মূসার প্রথম নামাজে জানাজা বাদ মাগরেব

বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসার মরদেহ তার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এবিএম মূসার ছেলে ডা. নাসিম মূসা জানিয়েছেন, তার বাবার প্রথম নামাজে জানাজা বুধবার বাদ মাগরিব (মাগরিবের নামাজের পর) মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এবং তৃতীয় নামাজে জানাজা বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে।

তবে দাফনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। তারা পরিবারের সব সদস্য বসে কখন, কিভাবে কোথায় দাফন করা হবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান ডা. নাসিম মূসা।

বুধবার দুপুর সোয়া একটায় রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন এবিএম মূসা (ইন্নালিল্লাহে… রাজেউন)।

এবিএম মূসার মেয়ে পারভীন সুলতানা ঝুমা বাংলানিউজকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত সোমবার ল্যাবএইডে ভর্তি হন এবিএম মূসা। তিনি ব্লাড ক্যান্সারের মতো রোগ মাইলো ডিসপ্লাস্টিক সিনড্রোম-এ আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে মধ্যরাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তিনি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. বরেণ চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রবীণ এ সাংবাদিককে ফেরাতে সকল চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন তার নেতৃত্বাধীন বিশেষ টিম। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বুধবার সোয়া একটায় জীবনপ্রদীপ নিভে আসে দেশ ও জাতির বিবেকসম এবিএম মূসার। এর পরই তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার সাইফুর রহমান লেলিন।

এবিএম মূসার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী সেতারা মূসা, এক ছেলে ডা. নাসিম মূসা ও এক মেয়ে পারভীন সুলতানা ঝুমাসহ অসংখ্য ভক্ত ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও গুণী ব্যক্তিত্ব একুশে পদক পাওয়া সাংবাদিক এবিএম মূসার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোক বিবৃতিতে বলেন, দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে এবিএম মূসা বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার জগতে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

১৯৩১ সালে ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার ধর্মপুর গ্রামে জন্ম নেন এবিএম মূসা। প্রায় ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতা জীবন ছিল তার।

মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফের মাধ্যমে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। এরপর যোগ দেন পাকিস্তান অবজারভারে।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় পাকিস্তান অবজারভার বন্ধ হলে সংবাদে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে আবার পাকিস্তান অবজারভারে ফিরে এসে ১৯৭১ সাল সাল পর্যন্ত প্রথমে প্রতিবেদক ও পরে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমসসহ বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন এবিএম মূসা। রণাঙ্গন থেকে মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ পাঠিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের সশস্ত্র সংগ্রামে ভূমিকা রাখেন তিনি।

স্বাধীনতার পর বিটিভির মহাব্যবস্থাপক ও মর্নিং নিউজের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবিএম মূসা।

এবিএম মূসা ১৯৭৮ সালে যোগ দেন ব্যাংককে এসকাপে যোগ দেন।

১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদক ছিলেন তিনি।

২০০৪ সালে দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। পরে যুগান্তর ছেড়ে দেন।



মন্তব্য চালু নেই