এবার হাতের নাগালে জাতীয় পরিচয়পত্র
জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে বা সংশোধন করতে আর ভোগান্তি পোহাতে হবে না। জেলা উপজেলা জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে গিয়ে অনলাইনেই সহজে সব কাজ সারা যাবে।
আগামী জানুয়ারি থেকেই প্রাথমিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে লক্ষ্যে ইসির জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সার্ভার স্টেশনগুলোর সঙ্গে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কের (ভিপিএন) মাধ্যমে ইসির তথ্যভাণ্ডারের (ডাটাবেজ) সঙ্গে সংযোগের কাজ শেষ হলে ভোটাররা জেলা-উপজেলা অফিস থেকেই যাবতীয় সেবা নিতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় সার্ভার স্টেশনগুলোর সরঞ্জাম ও সংযোগ স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রম শেষের দিকে। সার্ভার স্টেশন সংযোগ চালু হলে সহজেই ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি,সংশোধন,হারিয়ে যাওয়া কার্ড উত্তোলন করা যাবে।
জানা যায়, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির কারিগরি সহায়তায় ২০০৮ সালে কনস্ট্রাকশন অব উপজেলা অ্যান্ড রিজিওনাল সার্ভার স্টেশনস ফর ইলেক্টোরাল ডাটাবেজ (সিএসএসইডি) প্রকল্পের আওতায় শুরু হওয়া ৪৬৪টি সার্ভার স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। গত সেপ্টম্বর পর্যন্ত ৯টি আঞ্চলিক কার্যলয় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের সার্ভার স্টেশনসহ ৩৯৩টি থানা-উপজলা সার্ভার স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি রয়েছে আরো ৭১টি সার্ভার স্টেশনের নির্মাণ কাজ।
নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২৫১ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য (অনুদান) ১০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের অনুকূলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এডিপিতে মোট বরাদ্দ দেয়া হয় ৩৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। একই অর্থবছরে সেপ্টম্বর পর্যন্ত এডিপি থেকে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা যা বরাদ্দের ২১ শতাংশ।
প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে নভেম্বর ২০০৮ থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ৩০৪ কোটি ১২ লাখ টাকা। যা প্রকল্প ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ।
বর্তমানে নির্মাণ হওয়া সার্ভার স্টেশনগুলো থেকে ইসির মূল তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করা যায় না। এ কারণে চলমান ভোটার তালিকা হালানাগাদের তথ্য সিডি, ডিভিডি ও হার্ডডিস্কের মাধ্যমে মূল তথ্যভাণ্ডারে রাখা হচ্ছে। তবে ভিপিএন সংযোগ দেয়া হলে মূল তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশ করে ভোটাদের তথ্য হালনাগাদ করা যাবে।
জেলা-উপজেলার সার্ভার স্টেশনগুলোর কাজের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে হওয়া হলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলনাতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন বলেন, ‘আশা করছি জানুয়ারি থেকেই সার্ভার স্টেশনগুলোর কার্যক্রম শুরু হবে। সে লক্ষ্যেই সার্ভার স্টেশনগুলোর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। সার্ভার স্টেশন সংযোগ চালু হলে উপজেলা থেকেই ভোটাররা খুব সহজেই জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সেবা নিতে পারবেন।’
অন্যদিকে সার্ভার সেশ্টনগুলো চালু হলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ না করার চিন্তা করছে ইসি। সার্ভার স্টেশনগুলো চালু হলে ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা জেলা-উপজেলা অফিসে গিয়েই ভোটার হতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সার্ভার স্টেশনগুলোর কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে বিভাগীয়, জেলা-উপজেলার সার্ভার স্টেশনগুলোর ভিপিএন কানেকশন সম্পন্ন হলে আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ভোটার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিরা স্থানীয় নির্বাচন অফিসে এসে ফরম পূরণ করে ভোটার হতে পারবেন এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।’
প্রসঙ্গত, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কাজে বাধ্যতামূলক জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হচ্ছে। এ কারণেই দিন দিন বাড়ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্ব।
২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণের মধ্যে খুব একটা ধারণা ছিল না। অনেকটাই দায়সাড়াভাবেই ভোটারদের অনুপস্থিতিতেই ফরম পূরণ করেছে তথ্য সংগ্রকারীরা। এ কারণে বিভিন্ন ধরনের ভূলভ্রান্তি থেকে যায়। পরে ভুল সংশোধন করতে গিয়ে ভোটারদের পড়তে হয় মহাভোগান্তিতে। জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিসে মাসের পর মাস ধরনা দিয়েও কাজ হয় না। দালালদের খপ্পরে পড়ে কখনো গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা। শেষমেষ আসতে হয় রাজধানীতে। কিন্তু সেখানেও কাজটি সহজ নয়। পদে পদে হয়রানি, প্রতারণা।
মন্তব্য চালু নেই