এবার রাষ্ট্রপতির বিমানে বিপত্তি : অতি গোপনে তদন্ত, কর্মকর্তা বরখাস্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটের জরুরি অবতরণের রেশ না কাটতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ভিভিআইপি ফ্লাইটে বিপত্তি ঘটেছে। কেমিক্যালযুক্ত পানি দিয়ে এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিনের বেড পরিষ্কারের সময় রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন বিমানের এক জুনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার।

শেষ মুহূর্তের এ তৎপরতায় ১১ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আসার সময় ভয়াবহ কোনো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় রাষ্ট্রপতির ফ্লাইট। শুরুতে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও এখন বিমান কর্তৃপক্ষ অতি গোপনে বিষয়টি তদন্ত শুরু করেছে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়ম হলো ইঞ্জিন ও ইঞ্জিনের বেড পরিষ্কার কিংবা ধুতে হবে সাধারণ ভালো পানি দিয়ে। কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ দাহ্য পদার্থ ইঞ্জিনের গায়ে লাগলে আকাশে উড্ডয়ন অবস্থায় ওই দাহ্য পদার্থে আগুন ধরে বিমান ক্র্যাশ করার আশঙ্কা থাকে।

বিমানসূত্র জানায়, গত ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান। পরে তাকে দেশে আনার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষ বি-৭৩৭ বোয়িং এয়ারক্রাফটকে ভিভিআইপি ঘোষণা দেয়। ১০ ডিসেম্বর ওই ফ্লাইটটির সব ধরনের চেক ও প্রকৌশলজনিত কাজ শেষে সেটি রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে। তারা শাহজালালের হ্যাঙ্গারে ফ্লাইটটি নিরাপত্তা ফিতা দিয়ে বেষ্টনীতে রাখে। ১০ ডিসেম্বর বিমানের প্রকৌশল বিভাগের জুনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার মাহবুবুল ইসলাম ফ্লাইটটির ইঞ্জিন ধোয়ার জন্য এক কনটেইনার পানি নিয়ে সেখানে যান। মাহবুব নিরাপত্তা বেষ্টনীর গেট দিয়ে না ঢুকে ফিতা টপকে ভিতরে ঢুকে পড়েন। এটি ফ্লাইটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের চোখে পড়ে। মাহবুব যখন ইঞ্জিনের বেড ধোয়া শুরু করেন তখন শাহাদাত হোসেন নামে আরেক এয়ারক্রাফট মেকানিক তাকে বাধা দেন।

শাহাদাত তাকে বলেন, ‘এই পানি থেকে কেরোসিনের গন্ধ বেরোচ্ছে। এটি ব্যবহূত কেমিক্যাল মিক্সড করা পানি। এ পানি দিয়ে ইঞ্জিন ধোয়া যাবে না। ‘ এ নিয়ে দুজনের কথাকাটাকাটি হয়। এরই ফাঁকে নিরাপত্তাসংশ্লিষ্টরা ওই পানি পরীক্ষা করে দেখেন তা ইঞ্জিন ধোয়ার উপযুক্ত নয়। ঘটনাটি তারা বিমানের শীর্ষ ম্যানেজমেন্টকে জানান। এরপর বিমান কর্তৃপক্ষ মাহবুবুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। জানা যায়, টেকনিশিয়ান- সিদ্দিকুর রহমান ওইদিন ইঞ্জিনের বি নাটের পাশে একটি সেন্সর সিস্টেম বদল করেছিলেন। আর জেটিও মাহবুবুল ইসলাম ইঞ্জিনের চারদিকে থাকা কাউলিং বক্স খুলে দিয়েছিলেন।

কাউলিং বক্স খোলা ছাড়া কোনো টেকনিশিয়ানের পক্ষে ইঞ্জিনে কোনো ধরনের কাজ করার সুযোগ নেই। মোট কথা, বিমানের যে কোনো ইঞ্জিনের কাজ করতে হলে টেকনিক্যাল অফিসারদের সহযোগিতা লাগবেই। এ ক্ষেত্রে কাউলিং বক্স বন্ধ করার সময় টেকনিক্যাল অফিসারদের দায়িত্ব হচ্ছে টেকনিশিয়ান সবকিছু ঠিকমতো লাগিয়েছেন কিনা তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কাউলিং বক্স বন্ধ করা। কিন্তু মাহবুব সেদিন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি বলে অভিযোগ। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘এটা এত বড় ঘটনা নয়। ওই ফ্লাইট পরিষ্কারের জন্য যে পাত্রে পানি নেওয়া হচ্ছিল তাতে কেরোসিনের গন্ধ ছিল। তখন বিমানের লোকজনই তাতে বাধা প্রদান করেন। এ সময় এসএসএফ তাকে আটক করে। পরে তাকে বিমানের কাছেই সোপর্দ করে। এ ঘটনায় তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। ‘ তবে বিমান প্রকৌশল শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেছেন, এটা যদি ভুল বা গাফিলতিবশত হয়ে থাকে তাহলেও বিমান দায় এড়াতে পারবে না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ, দেশের নম্বর ওয়ান ভিভিআইপি ফ্লাইটের গাফিলতি অবশ্যই বড় ধরনের অপরাধ।

এটা কঠোর শাস্তির দাবি রাখে। বিমানের প্রকৌশল শাখার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দাহ্য পদার্থ দিয়ে ইঞ্জিনের বেড পরিষ্কারের চেষ্টা ছাড়াও শেষ মুহূর্তে ওই ফ্লাইটে আরও বড় ধরনের ত্রুটি ধরা পড়েছিল। পরে তড়িঘড়ি করে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের ডেকে এনে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে ফ্লাইটটিতে। তিনি বলেন, যে কোনো ফ্লাইট ভিভিআইপি হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পর সাধারণত সেটির সার্বিক ব্যবস্থা বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে চলে যায়। সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বিভাগ ফ্লাইটটির চারদিকে নিরাপত্তা ফিতা দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করে। এ সময় নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্স ও নিদিষ্ট পথ ছাড়া ওই বেষ্টনীতে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষেধ। বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওই বেষ্টনীতে প্রবেশের সুযোগ থাকে না। বিডি-প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই